০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪: কলকাতার গড়িয়াহাটের ফুটপাতগুলো এখন ক্রেতাদের ভিড়ে ঠাসা নয়। যেখানে আগে এই সময়ে দোকানে দোকানে বিক্রেতাদের ব্যস্ততা চোখে পড়ত, সেখানে এখন বেশিরভাগ দোকান ফাঁকা পড়ে আছে। বেশ কিছু ফুটপাত প্রায় জনশূন্য, দূর থেকে দাঁড়ালেও তা বোঝা যাচ্ছে। কিছু দোকানে অল্প কয়েকজন ক্রেতা দেখা গেলেও তাদের সংখ্যা খুবই কম। “কম দাম” বলে হাঁক-ডাক করেও বিক্রেতারা বিশেষ লাভ করতে পারছেন না। এক দোকানদার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “কে বলবে যে তিন সপ্তাহ পর মহালয়া? সারা সপ্তাহে তো মানুষ আসছেন না, ছুটির দিনেও শুধু প্রতিবাদ মিছিল।”
পুজো শুরু হতে এক মাসও বাকি নেই, তবে এই বছর কলকাতার বাজারে তার কোনো আভাস মিলছে না। ছুটির দিনগুলোতেও ক্রেতাশূন্য বাজারের একই ছবি উত্তর কলকাতার হাতিবাগান থেকে দক্ষিণের গড়িয়াহাট পর্যন্ত। আর জি কর হাসপাতালের ঘটনার জেরে শহরে প্রতিবাদের ঝড় বইছে, যার প্রভাব পড়ছে পুজোর বাজারেও। অধিকাংশ ব্যবসায়ীর মনে উদ্বেগ বাড়ছে, পুজোর বেচাকেনা আদৌ জমবে কি না।

রবিবার সকাল থেকে বৃষ্টিতে কিছুটা স্বস্তি এলেও হাতিবাগান এলাকায় তেমন কোনো পরিবর্তন দেখা যায়নি। যেখানে ক্রেতাদের ভিড়ে বাজার জমজমাট থাকার কথা, সেখানে প্রতিবাদ মিছিলেই এলাকাটি সরগরম ছিল। বিকেলে হাতিবাগানের ফুটপাত ও বড় দোকানগুলোতে কিছু সংখ্যক ক্রেতা ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন, তবে কেনাকাটার সেই পুরোনো ভিড় নেই। এক ব্যবসায়ী অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, “বাজার দেখে মাঝে মাঝে মনে হচ্ছে নিজের চোখকে বিশ্বাস করাই মুশকিল।”

গড়িয়াহাটেও পরিস্থিতি একই রকম। ফুটপাতের দোকানগুলো প্রায় ক্রেতাশূন্য। বিকেলে মানববন্ধন কর্মসূচির কারণে অনেকেই কেনাকাটা ছেড়ে প্রতিবাদে যোগ দিয়েছেন। পুজোর কেনাকাটার প্রসঙ্গে গড়িয়াহাটের এক ব্যবসায়ী, পাঁচু সাহা বলেন, “এই সময়ে বিকেলে গলিতে ঢোকাই মুশকিল হত। রাত ৯টা পর্যন্ত একই রকম ভিড় থাকত। এখন যা অবস্থা, ফুটপাথে ফুটবল খেলা যাবে মনে হচ্ছে!” পুলিশ ভিড় সামলানোর জন্য দড়ি ও ব্যারিকেডের ব্যবস্থা করলেও, সেগুলো ব্যবহার করতে হয়নি, কারণ ক্রেতার সংখ্যা তেমনই কম।

যদিও নিউ মার্কেটে কিছুটা ভিন্ন চিত্র দেখা গেল। দুপুরের পর থেকে ক্রেতারা সেখানে ভিড় করতে শুরু করেন। কেনাকাটার ব্যাগ হাতে নিয়ে ঘোরাঘুরি করতে থাকা এক তরুণী, অস্মিতা সেনগুপ্ত বলেন, “পুজোর আগে কেনাকাটা করে উৎসবের আনন্দ শুরু হত। কিন্তু এবার যা পরিস্থিতি, তাতে আনন্দটাই মাটি হয়ে যাচ্ছে।” তবে বাচ্চাদের কথা মাথায় রেখে কিছু কেনাকাটা করে নিয়েছেন তিনি। যদিও বিকেলের পর ধর্মতলা চত্বরে বড় মিছিল বেরোলে তার প্রভাব বাজারেও পড়ে। ফুটপাতে বসা এক বিক্রেতা, মৌসম খান মিছিলের দিকে তাকিয়ে বলেন, “এখন মানুষের মন থেকে পুজোর আনন্দ হারিয়ে গেছে। প্রতিবাদের আগুনই কেবল জ্বলছে।”
4o