দক্ষিণ ২৪ পরগনার মথুরাপুর ১ নম্বর ব্লকের অন্তর্গত দক্ষিণ বিষ্ণুপুর মহাশ্মশানে অবস্থিত একটি কালীমন্দির, যেখানে চিতার আগুন কখনও নিভে না। এই মন্দিরের ইতিহাস প্রায় ১১৫ বছরের পুরনো, এবং মন্দিরের মূল দেবী “মা করুণাময়ী কালী”। তবে মন্দিরের শুরু অনেক আগে, চারশো বছরের পুরনো শ্মশান কালী মা এখানে পূজিত হন।
কিছু সময় আগে, এই অঞ্চল ছিল গভীর জঙ্গলে ঢাকা, যেখানে বিষাক্ত সাপ, হিংস্র জন্তু এবং বাঘের বসবাস ছিল। কালের সাথে সাথে এখানে বসতি গড়ে ওঠে, কিন্তু মায়ের পুজোতে এখনও আছে অতিপ্রাকৃত মায়া। মায়ের পিছনে দেখা যায় সাজানো ১০৮টি নরমুণ্ডর, যা সাধারণ কোনো মাথার খুলি নয়। এই মুণ্ডগুলো তাদের, যারা অপঘাতে প্রাণ হারিয়েছেন। এই মুণ্ডগুলিকে তন্ত্র সাধনায় ব্যবহৃত হয়।
মায়ের সামনে রয়েছে পাঁচটি নরমুণ্ড দিয়ে তৈরি পঞ্চমুন্ডির আসন, যেখানে বসে সাধকরা তন্ত্রসাধনা করেন। মন্দিরের প্রধান পুরোহিত শ্যামল চক্রবর্তী এই পূজা পরিচালনা করেন। কথিত আছে, এখান থেকেই রাজা ভগীরথ গঙ্গাকে গঙ্গাসাগরে নিয়ে গিয়েছিলেন।
কালীপূজার দিনে একটি বিশেষ নিয়ম পালন করা হয়, যেদিন প্রথম যে মৃতদেহ আসে তার আত্মার শান্তির উদ্দেশ্যে পূজার আয়োজন করা হয়। ১০৮টি জবা ফুল দিয়ে সেই মৃতদেহকে স্নান করানো হয় এবং মায়ের পায়ে নিবেদন করা হয়। বিশেষত শনি এবং মঙ্গলবার এখানে বহু ভক্ত আসে মায়ের আশীর্বাদ নিতে, কারণ প্রচলিত রয়েছে যে মা করুণাময়ী কালী ভক্তদের ইচ্ছা পূর্ণ করেন।
এই মন্দিরে পশু বলি নিষিদ্ধ, এবং পূজার সময় মদ, গাঁজা এবং শোল মাছ দিয়ে দেবীকে আরাধনা করা হয়। কালীপূজার দিনে হাজার হাজার ভক্ত সমাগম হয় এই পবিত্র স্থানে মায়ের দর্শন করতে। এই বছরও পূজার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে, যেখানে হাজারো মানুষ মায়ের পূজা উপভোগ করতে আসবেন।