সৃজিত মুখোপাধ্যায় পরিচালিত মৃণাল সেনের জীবনীভিত্তিক চলচ্চিত্র ‘পদাতিক’ ইতিমধ্যেই সাড়া ফেলেছে চলচ্চিত্রপ্রেমীদের মধ্যে। তবে এই চলচ্চিত্রটি সফলভাবে নির্মাণের পেছনে মৃণাল সেনের পুত্র কুণাল সেনের অসামান্য ভূমিকা ছিল, যা সৃজিত নিজেই স্বীকার করেছেন। আনন্দবাজার অনলাইনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সৃজিত মুখোপাধ্যায় এই প্রজেক্টের নেপথ্যের গল্প শেয়ার করেছেন।

কুণাল সেনের সহায়তা: সৃজিতের অকপট স্বীকারোক্তি
সৃজিত মুখোপাধ্যায় বহুদিন ধরেই কুণাল সেনের সঙ্গে পরিচিত ছিলেন। তবে ‘পদাতিক’ ছবির জন্য তাঁকে বারবার নানা প্রশ্ন করে সহযোগিতা নিতে হয়েছে। সৃজিত বলেন, “কুণালদাকে বহু দিন ধরে চিনি। ওঁর সহযোগিতা ছাড়া এই ছবিটা সম্ভব হত না।” মৃণাল সেনের জীবনের এমন অনেক ব্যক্তিগত ও সাধারণ দিক নিয়ে আলোচনা করেছেন সৃজিত ও কুণাল, যা চলচ্চিত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
বাবার জীবন নিয়ে সতর্কতার পরামর্শ
কুণাল সেন, যিনি নিজে একজন স্বনামধন্য ব্যক্তি, বাবার জীবনীচিত্র নির্মাণের ক্ষেত্রে সৃজিতকে সতর্ক করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, “আমার বাবা রক্তমাংসের মানুষ ছিলেন। জীবনীচিত্র বানাতে গিয়ে পুজো কোরো না। কিছু বিষয়ে তিনি অসাধারণ ছিলেন। আবার কিছু বিষয়ে খুবই সাধারণ ছিলেন। সেটা যেন থাকে ছবিতে।” সৃজিত এই পরামর্শ খুব গুরুত্বসহকারে গ্রহণ করেন এবং ছবিতে মৃণাল সেনের ব্যক্তিত্বের এই দিকগুলোকে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন।
বিশ্বের জীবনীচিত্রের প্রবণতা এবং ‘পদাতিক’-এর বিশেষত্ব
সৃজিত মুখোপাধ্যায় জীবনীচিত্র নির্মাণের আন্তর্জাতিক প্রবণতা নিয়ে তাঁর মতামত প্রকাশ করেছেন। উদাহরণ হিসেবে তিনি ‘ওপেনহাইমার’ ছবির কথা উল্লেখ করে বলেন, “বিশ্বের জীবনীচিত্রের ক্ষেত্রে সেই ব্যক্তিকে খুব মহান ভাবে প্রদর্শনের প্রবণতা থাকে।” কিন্তু ‘পদাতিক’ ছবিতে তিনি তা করেননি। কুণাল সেনের পরামর্শ এবং তাঁর সহায়তায় সৃজিত মৃণাল সেনের জীবনের বাস্তবদৃশ্য ফুটিয়ে তুলেছেন।
ছবির নির্মাণকাল এবং মৃণাল সেনের জীবনের অজানা দিক
‘পদাতিক’ ছবির নির্মাণের সময় সৃজিত কুণাল সেনকে নানা প্রশ্ন করতেন, যেমন— গীতা সেন কি পান খেতেন? মৃণাল সেন কি মানিকবাবুকে ‘মানিকদা’ না ‘মানিকবাবু’ বলে ডাকতেন? এমন হাজারো প্রশ্নের উত্তর জানতে চেষ্টা করতেন সৃজিত। কুণাল সেন সেই সময় তাঁর ‘বন্ধু’ বইয়ের খসড়া পাঠিয়ে দেন, যা ছবির নির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
‘পদাতিক’ ছবির পেছনের গল্পে যে পরিমাণ গবেষণা এবং সহযোগিতা লুকিয়ে আছে, তা সত্যিই প্রশংসার যোগ্য। মৃণাল সেনের জীবনের নানা অজানা দিক এবং তাঁর ব্যক্তিত্বের গভীরতা বুঝতে সৃজিত মুখোপাধ্যায় কুণাল সেনের কাছ থেকে যে অভাবনীয় সহায়তা পেয়েছেন, তা এই চলচ্চিত্রকে আরও সমৃদ্ধ করেছে।