যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে মহাকাশে আটকে পড়েছেন দুই মহাকাশচারী, সুনীতা উইলিয়ামস এবং বুচ উইলমোর। তাদের মহাকাশযান বোয়িং স্টারলাইনারের যান্ত্রিক সমস্যার কারণে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। প্রথমে মনে করা হয়েছিল যে সমস্যা সমাধান করে সুনীতাদের নিয়ে পৃথিবীতে ফিরবে স্টারলাইনার, কিন্তু পরে জানা যায়, তাদের না নিয়েই সেপ্টেম্বরের শুরুতে পৃথিবীতে ফিরে আসবে মহাকাশযানটি।


মহাকাশযানের সমস্যা ও ক্ষয়ক্ষতির তথ্য
বোয়িং স্টারলাইনারের সমস্যাটি ছিল হিলিয়াম গ্যাস লিক হওয়া। নাসার মতে, এই অবস্থায় পৃথিবীতে ফিরে আসার চেষ্টা করলে তা বিপজ্জনক হতে পারে। মহাকাশযানটি ফিরে আসার ফলে বোয়িংয়ের বিশাল আর্থিক ক্ষতি হয়েছে, যার পরিমাণ প্রায় সাড়ে ১২ কোটি ডলার, ভারতীয় মুদ্রায় যা প্রায় ১০৪৮ কোটি টাকা।

নভোচরদের বর্তমান পরিস্থিতি ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
নাসার প্রতিবেদন অনুযায়ী, বর্তমানে সুনীতা উইলিয়ামস এবং বুচ উইলমোর আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্রে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন এবং আগামী ছ’মাস তাদের সেখানেই থাকতে হবে। ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে নতুন একটি মহাকাশযান পাঠিয়ে তাদের পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনা করেছে নাসা। ইলন মাস্কের স্পেসএক্স ড্রাগন ক্যাপসুলে তাদের ফিরিয়ে আনার কথা ভাবা হচ্ছে।

শারীরিক অবস্থা ও উদ্বেগ
দীর্ঘ সময় মহাকাশে অবস্থান করার ফলে সুনীতা এবং বুচের শারীরিক অবস্থা ধীরে ধীরে অবনতি ঘটছে। মহাকাশে অভিকর্ষের অভাবে মানবদেহের পেশি ও হাড়ের ঘনত্ব দ্রুত হ্রাস পেতে থাকে। গবেষণা অনুযায়ী, মহাকাশে প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ৩ লক্ষ লোহিত রক্তকণিকা ধ্বংস হয়, যা রক্তাল্পতার ঝুঁকি বাড়ায়। হাড় ও পেশির ক্ষয় রোধে প্রতিদিন কয়েক ঘণ্টা করে ব্যায়াম করছেন তারা। এছাড়া, তাদের স্বাস্থ্যের উপর নজর রাখছেন চিকিৎসকেরা। যদিও নাসা দাবি করছে যে, সুনীতা এবং বুচের প্রাণসংশয়ের সম্ভাবনা নেই, কিন্তু দীর্ঘ সময় মহাকাশে থাকার ফলে শারীরিক অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে।

মহাকাশে দীর্ঘকালীন অবস্থানের রেকর্ড
এ পর্যন্ত মহাকাশে সবচেয়ে বেশি সময় কাটানোর রেকর্ড রয়েছে নাসার ফ্র্যাঙ্ক রুবির। তিনি মোট ৩৭১ দিন আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্রে অবস্থান করেছিলেন। তবে, মহাকাশে একটানা সবচেয়ে বেশি সময় থাকার রেকর্ড রয়েছে রাশিয়ান নভোচর ভ্যালেরি পলিয়াকভের, যিনি ১৯৯০ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে মির মহাকাশ স্টেশনে ৪৩৭ দিন কাটিয়েছিলেন।