দুর্গাপুজো ২০২৫ শুরু হতে বাকি !!

Days
Hours
Minutes
Seconds

পিসিওএসের সমস্যায় কারা বেশি ভোগেন, হরমোন ভারসাম্যহীন হয়ে পরার লক্ষণ সম্পর্কে জানুন ও নিরাময়ের পদ্ধতি কি কি

পিসিওএসের সমস্যায় কারা বেশি ভোগেন, হরমোন ভারসাম্যহীন হয়ে পরার লক্ষণ সম্পর্কে জানুন ও নিরাময়ের পদ্ধতি কি কি

পিসিওএসের প্রকৃতি ও কারণ

পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিন্ড্রোম (PCOS) একটি সাধারণ হরমোনাল সমস্যা, যা মহিলাদের মধ্যে প্রায়শই দেখা যায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রার ভুল এবং অস্বাস্থ্যকর অভ্যাসের কারণে পিসিওএসের সমস্যায় ভোগার সংখ্যা বেড়েছে। এই সমস্যার ফলে শরীরে অ্যান্ড্রোজেন হরমোনের বৃদ্ধি ঘটে, যার কারণে ডিম্বাশয়ের চারপাশে ছোট ছোট সিস্ট গঠন হয়। এটি অনিয়ন্ত্রিত ঋতুস্রাবের কারণ হয়ে দাঁড়ায় এবং মহিলাদের ওজন বৃদ্ধি পেতে থাকে।

হরমোন ভারসাম্যহীনতার লক্ষণ

পিসিওএসে আক্রান্ত মহিলাদের শরীরে হরমোনের ভারসাম্যহীনতা দেখা দেয়। এই সমস্যা বিভিন্ন লক্ষণের মাধ্যমে প্রকাশ পায়, যেমন:

  1. অসঙ্গত ঋতুস্রাব: অনিয়মিত ঋতুস্রাব পিসিওএসের অন্যতম প্রধান লক্ষণ। ঋতুস্রাব খুব কম বা খুব বেশি হতে পারে।
  2. ওজন বৃদ্ধি: পিসিওএসের ফলে শরীরের অতিরিক্ত মেদ জমে, বিশেষ করে পেটের চারপাশে। এতে ওজন দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং এটি নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়ে।
  3. হরমোনের উচ্চমাত্রা: শরীরে অ্যান্ড্রোজেন হরমোনের পরিমাণ বেড়ে গেলে চুল পড়ে যাওয়ার সমস্যা দেখা দেয় এবং ত্বকে তেলের পরিমাণ বাড়ে।
  4. বিরক্তিকর ত্বক এবং চুল: পিসিওএসে আক্রান্ত মহিলাদের ত্বকে অতিরিক্ত লোম বৃদ্ধি পেতে পারে এবং চুল পড়ার সমস্যা বেড়ে যায়।

হরমোন ভারসাম্যহীনতার সঙ্গে সম্পর্কিত অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা

পিসিওএসের কারণে হরমোন ভারসাম্যহীনতার ফলে অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যার ঝুঁকিও বেড়ে যায়:

  1. ডায়াবেটিস: পিসিওএসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের শরীরে ইনসুলিনের পরিমাণ কম থাকে, যা ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়। যারা ইতিমধ্যেই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত তাদেরও পিসিওএসের সমস্যা হতে পারে।
  2. হৃদরোগ: পিসিওএসের কারণে হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়, কারণ এটি রক্তচাপ এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি করতে পারে।
  3. উচ্চ রক্তচাপ: হরমোনের ভারসাম্যহীনতার ফলে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যাও হতে পারে।

পিসিওএসের নিয়ন্ত্রণের উপায়

পিসিওএসের উপসর্গগুলো নিয়ন্ত্রণের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ রয়েছে:

  1. স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস: পিসিওএসের রোগীরা জাঙ্ক ফুড, প্রক্রিয়াজাত খাবার, মিষ্টি এবং তেলে ভাজা খাবার এড়িয়ে চলা উচিত। পরিবর্তে, মাছ, কুমড়ার বীজ, সূর্যমুখী বীজ, ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার এবং টম্যাটো খাওয়া উচিত। এই খাবারগুলো হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
  2. ওজন নিয়ন্ত্রণ: অতিরিক্ত ওজন কমানো পিসিওএসের উপসর্গ কমাতে সাহায্য করে। সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং নিয়মিত ব্যায়াম মাধ্যমে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা যেতে পারে।
  3. নিয়মিত ব্যায়াম: দৈনিক ৩০ মিনিটের মাঝারি ধরনের ব্যায়াম যেমন হাঁটা, সাইক্লিং বা যোগব্যায়াম হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়ক। এটি শরীরের ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়ায় এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
  4. চিকিৎসা ও ঔষধ: পিসিওএসের লক্ষণগুলো নিয়ন্ত্রণের জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ গ্রহণ করা যেতে পারে। হরমোনাল থেরাপি এবং ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স কমানোর জন্য বিভিন্ন ঔষধ ব্যবহৃত হতে পারে।
  5. স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট: স্ট্রেস হরমোনের ভারসাম্যকে প্রভাবিত করে। তাই স্ট্রেস কমানোর জন্য মেডিটেশন, ইয়োগা এবং মনস্তাত্ত্বিক সাপোর্ট গ্রহণ করা উচিত।

পিসিওএস একটি জটিল হরমোনাল সমস্যা যা জীবনের দৈনন্দিন অভ্যাস এবং খাদ্যাভ্যাসের কারণে আরও বৃদ্ধি পায়। সঠিক জীবনযাপন, খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন, নিয়মিত ব্যায়াম এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা গ্রহণ করে এই সমস্যার উপসর্গ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। পিসিওএসের সঙ্গে সচেতনভাবে মোকাবিলা করা এবং স্বাস্থ্যকর অভ্যাস মেনে চলা এই রোগের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব কমাতে সাহায্য করবে।

Facebook
Twitter
WhatsApp
Telegram
Email
Print
আরও পড়ুন
error: Content is protected !!