ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে জন্মাষ্টমীর পরের দিন পালিত হয় এক বিশেষ উৎসব, যার নাম নন্দ উৎসব। ভাদ্র মাসের কৃষ্ণা অষ্টমী তিথিতে পালিত এই উৎসবটি ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্মের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। এই উৎসবের প্রেক্ষাপট এবং উদযাপনের কিছু নিয়ম-আচার এখানে তুলে ধরা হলো।
নন্দ উৎসবের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট
পুরাণ অনুযায়ী, ভগবান শ্রীকৃষ্ণ যখন কংস বধের জন্য মর্তে অবতীর্ণ হন, তখন তিনি মাতা দেবকীর কোলে জন্মগ্রহণ করেন। এই আনন্দে তাঁর পালক পিতা গোকুলরাজ নন্দ গোটা গোকুলবাসীকে নিয়ে উৎসবের আয়োজন করেন। এই দিন শ্রীকৃষ্ণের জন্মের পর তাঁর পিতা বাসুদেব, শ্রীকৃষ্ণকে মাতা যশোদার কাছে রেখে আসেন এবং তার বদলে যশোদার কন্যা সন্তানকে দেবকীর কোলে তুলে দেন। পরদিন সকালে, নন্দরাজ তার পুত্র জন্মের খবর ঘোষণা করলে গোকুলবাসীরা নন্দ উৎসবে মেতে ওঠেন।

নন্দ উৎসবের নিয়ম-আচার
বিশেষ খাদ্য প্রস্তুতি: নন্দ উৎসব উপলক্ষে বিভিন্ন লোভনীয় খাবার তৈরি করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে তালের বড়া, ফুলুরি, লুচি, এবং বিভিন্ন ধরনের মিষ্টি।

দইয়ের হাঁড়ি ভাঙ্গা: দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নন্দ উৎসবের দিন পিরামিড তৈরি করে দইয়ের হাঁড়ি ভাঙ্গার একটি প্রচলন রয়েছে, যা অত্যন্ত জনপ্রিয়।

ভগবানের প্রিয় খাদ্য অর্পণ: শ্রীকৃষ্ণের প্রিয় খাদ্য, যেমন ননী, মাখন, নাড়ু, দই, দুধ ইত্যাদি পুজোর সময় ভগবানকে নিবেদন করা হয়।

নন্দ উৎসব পালনের স্থানসমূহ
ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে নন্দ উৎসব পালন করা হয়। মথুরা, বৃন্দাবন, এবং মণিপুরে এই উৎসবের বিশেষ প্রচলন রয়েছে।

কলকাতার বনেদি বাড়ি: কলকাতার কিছু বনেদি বাড়িতেও নন্দ উৎসব পালন করা হয়। শোভাবাজার রাজবাড়ি এবং দর্জিপাড়ার রাজকৃষ্ণ মিত্রের বাড়ি এই উৎসবের জন্য পরিচিত। মধ্য কলকাতার গোবিন্দ সেন লেনের চুনিমুনি দাসের বাড়িতে জন্মাষ্টমীর সঙ্গে নন্দ উৎসব পালিত হয়। সেখানে, জন্মাষ্টমীর পরের দিন পরিবারের বয়সজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি দই ও হলুদ নিয়ে উঠোনে সাতবার প্রদক্ষিণ করেন এবং সেই হাড়ি ফাটানো হয়। এর পর পায়েস ভোগ বিতরণ করা হয়।

ইসকন মন্দির ও অন্যান্য স্থান: কলকাতার এলবার্ট রোডের ইসকন মন্দিরে জন্মাষ্টমীর সঙ্গে নন্দ উৎসব পালিত হয়। বড়বাজার, হরিরাম গোয়েঙ্কা স্ট্রিট, সত্যনারায়ণ পার্ক, যদুবাবুর বাজার প্রভৃতি স্থানে এই উৎসব পালন করা হয়। এছাড়া খড়দহের শ্যামসুন্দর মন্দির, নৈহাটির কাঁঠালপাড়া শ্রী শ্রী বিজয়রাধাবল্লভজিউর মন্দির, কাঁচরাপাড়া ও কল্যাণীর কৃষ্ণরাইজিউর মন্দির, নদিয়ার চাকদহ, শান্তিপুর, নবদ্বীপ এবং মায়াপুরে নন্দ উৎসব পালনের দৃশ্য দেখা যায়।