নয়ডা-ভিত্তিক হোম স্যালন সার্ভিস সংস্থা ‘YesMadam’ সম্প্রতি এক বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে। অভিযোগ উঠেছে, কর্মীদের মানসিক চাপ সম্পর্কিত একটি সার্ভে করার পর, যেসব কর্মী “স্ট্রেস আছে” বলেছেন, তাদের মধ্যে ১০০ জনেরও বেশি কর্মীকে এক ধাক্কায় ছাঁটাই করা হয়েছে। এই ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছে নেটিজেনরা।
“স্ট্রেস বললাম, চাকরি চলে গেল!”
একজন প্রভাবিত কর্মী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, “YesMadam-এ আসলে কী হচ্ছে? প্রথমে এলোমেলো একটি সার্ভে করা হলো, আর যারা স্ট্রেসে আছি বলল, তাদের রাতারাতি ছাঁটাই করা হলো! শুধু আমাকে নয়, আরও ১০০ জনকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।”
এই ঘটনার একটি ইমেল স্ক্রিনশট, যা সংস্থার এইচআর ম্যানেজার প্রেরণ করেছিলেন, ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।

কী ছিল ভাইরাল হওয়া ইমেলে?
ইমেলে বলা হয়েছে, **“সম্প্রতি আমরা একটি সার্ভে পরিচালনা করেছি যাতে কর্মীদের স্ট্রেস নিয়ে অনুভূতি বোঝার চেষ্টা করা হয়েছে। অনেকেই তাদের উদ্বেগ এবং স্ট্রেসের কথা বলেছেন, যা আমরা গভীরভাবে মূল্য দিই ও শ্রদ্ধা করি।
কর্মক্ষেত্রে স্ট্রেসমুক্ত পরিবেশ গড়ে তোলার অঙ্গীকারে, আমরা কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছি—যেসব কর্মী ‘অতিরিক্ত স্ট্রেসে’ আছেন বলে জানিয়েছেন, তাদের সঙ্গে আমরা আর কাজ চালিয়ে যাব না।”**
এই সিদ্ধান্তকে ‘অমানবিক’ এবং ‘অর্থহীন’ বলে মন্তব্য করেছেন নেটিজেনরা। অনেকেই বলছেন, কর্মীদের মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত উদ্বেগ জানার জন্য সার্ভে করাটা ভাল উদ্যোগ ছিল, কিন্তু স্ট্রেসের কথা বলায় চাকরিচ্যুত করা সম্পূর্ণ অন্যায়।
কী বলছেন নেটিজেনরা?
সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এক ব্যবহারকারী লিখেছেন, “সম্প্রতি একটি স্টার্টআপ YesMadam তাদের কর্মীদের স্ট্রেস নিয়ে একটি সার্ভে পাঠাল এবং যারা ‘অতিরিক্ত স্ট্রেস’-এর কথা বলল, তাদের ছাঁটাই করল। এটা কী ধরনের যুক্তি?”
বিশিষ্ট ব্যক্তিদের প্রতিক্রিয়া
ইন্ডিগোর ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের অ্যাসোসিয়েট ডিরেক্টর শিতিজ ডোগরা এই ঘটনা নিয়ে লিঙ্কডইনে একটি পোস্ট করেন। তিনি লিখেছেন, “একটি সংস্থা কি আপনাকে স্ট্রেসের কারণে চাকরিচ্যুত করতে পারে? দেখে তো তাই মনে হচ্ছে, কারণ YesMadam ঠিক এই কাজটিই করেছে।”
সংস্থার সিদ্ধান্তকে কীভাবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা?
কর্মক্ষেত্রে মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুত্ব ক্রমবর্ধমানভাবে বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্ট্রেসের সমাধান হওয়া উচিত পরামর্শ এবং সহায়তার মাধ্যমে, চাকরিচ্যুতির মাধ্যমে নয়। মানসিক চাপ স্বীকার করার জন্য কর্মীদের শাস্তি দেওয়া হলে, ভবিষ্যতে কর্মীরা তাদের মনের অবস্থা সম্পর্কে কথা বলতে ভয় পাবেন।
এই ঘটনার পরে, অনেকে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে YesMadam-এর নীতির কড়া সমালোচনা করছেন। অনেকেই বলছেন, এটি একটি “অমানবিক সিদ্ধান্ত” এবং কর্মীদের প্রতি “সম্পূর্ণ অবহেলা” প্রদর্শন করেছে সংস্থাটি।
শেষ কথা
কর্মক্ষেত্রে মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত উদ্বেগ নিয়ে আলোচনা করা এখন সময়ের দাবি। কর্মীদের স্ট্রেস ম্যানেজমেন্টে সহায়তা করা উচিত, বরং চাকরি থেকে বাদ দেওয়া উচিত নয়। ‘YesMadam’-এর এই সিদ্ধান্ত নৈতিকতা ও মানবিকতার প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।