শীতের মরশুম মানেই ভ্রমণপ্রেমীদের কাছে সফরের আদর্শ সময়। দিনের উজ্জ্বল রোদ যেমন আনন্দদায়ক, তেমনই সন্ধ্যার হালকা ঠান্ডা আবহাওয়াতেও বাইক সফরের মজাই আলাদা। তবে তাপমাত্রা কমতে শুরু করেছে, বিশেষ করে বিকেল থেকে রাতের দিকে। এ সময় বাইকে দীর্ঘ সফর করলে ঠান্ডা লেগে সর্দি-কাশির সমস্যা হতে পারে। তাই কিছু সাবধানতা অবলম্বন করা অত্যন্ত জরুরি। বিশেষ করে, আপনার সফরসঙ্গী যদি শিশু হয়, তবে আরও বেশি সতর্ক থাকতে হবে। ঠান্ডা এড়াতে কী কী করবেন, তা এক নজরে জেনে নিন।
১. কান, মাথা এবং গলা ঢেকে রাখুন
শীতের বিকেল বা সন্ধ্যার পর বাইকে বেরোলে প্রথমেই কান ও মাথা ঢাকার ব্যবস্থা করুন। শুধুমাত্র হেলমেট দিলেই হবে না। মাথায় হালকা একটি উলের টুপি পরে তার ওপর হেলমেট চাপান। এতে হিমেল হাওয়া সরাসরি মাথায় লাগবে না। শিশুদের জন্য উলের টুপি এবং কান ঢাকার বিশেষ ব্যবস্থা রাখুন। পাশাপাশি, গলায় স্কার্ফ বা মাফলার পরলে ঠান্ডা বাতাস সরাসরি শরীরে প্রবেশ করতে পারবে না।
২. মাস্ক পরে বেরোন
শীতকালে বাতাসে দূষণ অনেকটাই বেশি থাকে। রাস্তার ধুলো, গাড়ির ধোঁয়া এবং কলকারখানার দূষণ মিশে বাতাসকে আরও দূষিত করে তোলে। এই দূষিত বাতাস শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে ফুসফুসে প্রবেশ করলে ঠান্ডা লেগে সর্দি-কাশি এবং সংক্রমণ হতে পারে। তাই বাইক সফরের সময় অবশ্যই মাস্ক পরে বেরোবেন। শিশুদের জন্যও মাস্ক পরানো উচিত।
৩. ত্বককে ঢেকে রাখুন, ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন
শীতকালে বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ কমে যায়, যার কারণে ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়। ফলে ঠোঁট, গাল, হাত, পা-সহ শরীরের আঢাকা অংশ ফাটতে শুরু করে। ঠান্ডা হাওয়া সরাসরি গায়ে লাগলে ত্বক দ্রুত শুষ্ক হয়ে যায়। তাই শরীরের খোলা অংশগুলো ঢেকে রাখুন। সফরে বেরোনোর আগে মুখ, হাত এবং পায়ে ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিন। গ্লাভস এবং মোজা পরে রাখুন, এতে হাত-পা ঠান্ডা লাগবে না।
৪. হাইড্রেটেড থাকুন, সঙ্গে গরম জল নিন
শীতকালে জল পানের প্রবণতা কমে যায়, যার ফলে শরীরে জলশূন্যতা দেখা দিতে পারে। কিন্তু বাইক সফরের সময় শরীর উষ্ণ রাখতে পর্যাপ্ত জলপান প্রয়োজন। তাই সফরে বেরোনোর আগে বেশি করে জল পান করুন এবং একটি ফ্লাস্কে গরম জল সঙ্গে রাখুন। দীর্ঘ সফরে মাঝে মাঝে গরম জল পান করলে ঠান্ডা লাগার সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যায়।
৫. ইনহেলার ও ওষুধ সঙ্গে রাখুন
শীতকালে অনেকের ঠান্ডার কারণে অ্যালার্জি বেড়ে যায়। ধুলো, ধোঁয়া বা ঠান্ডা বাতাসে অ্যালার্জি হলে হাঁচি, কাশি, শ্বাসকষ্টের সমস্যা দেখা দিতে পারে। যাঁদের হাঁপানির সমস্যা আছে, তাঁরা বাইকে সফরে গেলে অবশ্যই ইনহেলার সঙ্গে রাখুন। ফার্স্ট এড কিটে প্রয়োজনীয় ওষুধ রাখাও জরুরি। শ্বাসকষ্ট বা সর্দি-কাশি দেখা দিলে তাৎক্ষণিক চিকিৎসার জন্য ওষুধপত্র সহায়ক হবে।
৬. প্রয়োজনীয় গরম পোশাক পরুন
শীতের সফরে উপযুক্ত গরম পোশাক পরা খুবই জরুরি। হালকা গরম জ্যাকেট নয়, বরং পর্যাপ্ত উষ্ণতা দেয় এমন উলের পোশাক পরুন। শরীর যত বেশি ঢাকা থাকবে, তত কম ঠান্ডা লাগবে। শরীরের আঢাকা অংশগুলো ঢাকার চেষ্টা করুন। উলের টুপি, স্কার্ফ, গ্লাভস এবং মোজা ব্যবহার করুন। শিশুদের জন্য বাড়তি সুরক্ষার ব্যবস্থা করুন, কারণ তাদের ত্বক বেশি সংবেদনশীল।
শেষ কথা
শীতকালে বাইক সফরের আনন্দ অন্যরকম, তবে শারীরিক সুরক্ষার বিষয়টি উপেক্ষা করা উচিত নয়। সঠিক পোশাক, মাথা-কান-গলা ঢাকার ব্যবস্থা, ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার, পর্যাপ্ত জলপান এবং প্রয়োজনীয় ওষুধ সঙ্গে রাখলেই ঠান্ডা এড়ানো সম্ভব। শিশুদের সঙ্গে সফর করলে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করুন। সুরক্ষিত সফরের জন্য এই নিয়মগুলো মেনে চললে, ঠান্ডা হাওয়া আর সর্দি-কাশি নিয়ে দুশ্চিন্তা করতে হবে না।