বহু আগেই বাংলাদেশের তরুণরা ‘পারবে’ বলে আশাবাদী ছিলেন ড. ইউনূস

লেখকঃ তারিক চয়ন (সাংবাদিক ও কলামিস্ট)

আজ থেকে তিন বছরেরও বেশি সময় আগে (২০২১ সালের ২৭ জুলাই) বাংলাদেশের একমাত্র নোবেলজয়ী এবং সারা পৃথিবীতে সবচেয়ে পরিচিত ও জনপ্রিয় বাংলাদেশি (বর্তমানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা)
প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে কথা বলছিলাম।

তখন করোনাকাল। আমি তাকে বললাম, স্যার, সবাইতো আপনার কথা শুনতে চায়; আপনাকে পছন্দ করে, শ্রদ্ধা করে। কিন্তু, সরকার প্রধানের ভয়ে সেটা প্রকাশ করে না। আমি নিয়মিত আপনার কার্যক্রম তুলে ধরি বলে অনেকেই গোপনে আমার কাছে আপনার কথা জিজ্ঞেস করে। তারা জানতে চায় দেশ নিয়ে আপনার ভাবনা কি?

প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস

স্যার বেশ স্বাভাবিকভাবেই বললেন, “চয়ন এটা দুঃখের সময়। আমরা সব সময় খবর পাচ্ছি- বন্ধুবান্ধব মারা যাচ্ছে, আত্মীয়স্বজন মারা যাচ্ছে। মন খুব খারাপ হচ্ছে। কিন্তু এই দুঃখের দিনেও আমরা যেন ভবিষ্যৎকে নিয়ে চিন্তা করি।”

আমি বললাম, “স্যার, আমরাতো বলি তরুণরাই দেশের ভবিষ্যৎ। কিন্তু, এই তরুণদের সামনে নানান রকম তথাকথিত রোল মডেল হাজির করা হয়েছে। সরকারের নানা অপপ্রচার স্বত্ত্বেও তরুণরা যখন দেখে সারা পৃথিবীতে আপনাকে রোল মডেল মানা হচ্ছে তখন তারা খুব স্বাভাবিকভাবেই আপনার সম্পর্কে জানতে চায়, আপনার কথা শুনতে চায়…”

স্যার তখন বাংলাদেশের তরুণদের উদ্দেশ্যে বলেন, “বাংলাদেশ এবং পৃথিবীর ভবিষ্যৎ তোমার হাতে। এই কথাটা মনে রেখো। তোমার চেয়ে বয়স্কদের ওপর আর কোনো ভরসা করা যায় না। তাদের আর দেওয়ার কিছু নেই। তারা উল্টোটাই তোমাদের কাছ নিয়ে আসবেন। আমাদের বয়সী যারা আছেন, তারা এভাবেই শিখে এসেছেন, ভুল পৃথিবী গড়েছেন। সুতরাং, তাদের কাছে তোমাদের শিক্ষণীয় কিছু নেই। তোমরা এখন নিজের দায়িত্ব নিজেই নাও- এই বলে যে আমরা এটাকে সাজাবো। তোমাদের সেই ক্ষমতা রয়েছে। বয়স্কদের তুলনায় তোমাদের ক্ষমতা কিন্তু অসীম। এই ক্ষমতা সম্পর্কে সজাগ হও। আর, নিজেকে জিজ্ঞেস করো, আমি এই ক্ষমতা কী কাজে ব্যবহার করবো? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাওয়াটা খুব জরুরি। এই ক্ষমতা দিয়ে তুমি পুরো পৃথিবী উলটপালট করে নতুন পৃথিবী গড়তে পারো। এই দায়িত্বটা তুমি নাও। লেখাপড়া করবো, একটা চাকরি করবো, বেতন পাবো এই সীমাবদ্ধতার মধ্যে তুমি থেকো না। নিজেকে প্রশ্ন করলে দেখবে, যেগুলো আমাকে শেখানো হয়েছে, সেগুলো ভুল। তাই, আমাকে আবার নতুন করে শিখতে হবে, আমার মতো করে শিখতে হবে। কোনটা তোমার মতো সেটা তুমি তোমার বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে আলাপ করো। তাহলেই তুমি নিজের পথ খুঁজে পাবে। সারা দুনিয়া নির্ভর করছে তোমার সিদ্ধান্তের ওপর। তোমাকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে কোন ধরনের পৃথিবী তুমি চাও। এমন একটা পৃথিবী তোমার ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য রেখে দিয়ে যাও যেনো বলতে পারো- আমরাই প্রথম প্রজন্ম, যারা এই পৃথিবীকে সঠিক পথে নিয়ে এসেছি। আগের মানুষেরা একেবারে ভুল করে আমাদের মৃত্যুপথে নিয়ে যাচ্ছিল। তুমি-ই পারবে। ভেবো না, আমার কি এসব করার জন্য অত বুদ্ধি আছে? এটা বুদ্ধির নয়, ইচ্ছার বিষয়। ইচ্ছা থাকলে তুমি পারবেই। এই ইচ্ছাটা তুমি করো, এটাই আমার অনুরোধ।”

Facebook
Twitter
WhatsApp
Telegram
Email
Print
আরও পড়ুন
error: Content is protected !!