দুর্গাপুজো ২০২৫ শুরু হতে বাকি !!

Days
Hours
Minutes
Seconds

কেন বিপদে পড়লে ‘মে-ডে’ বলেন পাইলটরা? জানুন সংকেতটির ইতিহাস, প্রয়োগ ও গুরুত্ব

কেন বিপদে পড়লে ‘মে-ডে’ বলেন পাইলটরা? জানুন সংকেতটির ইতিহাস, প্রয়োগ ও গুরুত্ব

বৃহস্পতিবার, ১২ জুন, ২০২৫ দুপুরে আহমেদাবাদ থেকে লন্ডনগামী এয়ার ইন্ডিয়ার AI-171 বোয়িং ৭৮৭-৮ বিমানটি উড়ে যাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই ভেঙে পড়ে একটি হোস্টেলের উপর। সেই মুহূর্তে ককপিট থেকে ভেসে আসে এক ভয়ঙ্কর বিপদের সংকেত – “Mayday, Mayday, Mayday”। কেন এমন পরিস্থিতিতে এই শব্দ উচ্চারিত হয়? কী তার উৎস? এবং কেনই বা এটি আন্তর্জাতিকভাবে এত গুরুত্বপূর্ণ?


‘Mayday’ সংকেত: কী এবং কেন?

‘Mayday’ একটি আন্তর্জাতিক বিপদ সংকেত যা চরম বিপদের মুহূর্তে ব্যবহার করা হয় – বিশেষ করে আকাশপথে বা জলপথে চলাচলকারী যানবাহনের ক্ষেত্রে। এটি এমন এক সংকেত যা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেয়, এখনই সাহায্য না পেলে যাত্রীদের প্রাণ বিপন্ন।

কোথা থেকে এলো ‘Mayday’?

এই শব্দটি এসেছে ফরাসি শব্দ “m’aider” থেকে, যার অর্থ – “আমায় সাহায্য করুন” (Help me)। ১৯২০ সালের দশকে ব্রিটিশ বিমান পরিবহন ব্যবস্থা ফ্রান্সের সঙ্গে যোগাযোগে এই সংকেত ব্যবহার শুরু করে। পরে ১৯২৭ সালের রেডিও টেলিগ্রাফ কনভেনশনে এটিকে আন্তর্জাতিক মান্যতা দেওয়া হয়।

আগে কী ব্যবহার করা হতো?

‘Mayday’ আসার আগে সংকেত হিসেবে ব্যবহৃত হতো ‘SOS’। যদিও ‘SOS’ সাধারণত মোর্স কোডে পাঠানো হতো – ●●● – – – ●●● – কিন্তু দুর্বল রেডিও সিগনালে অনেক সময় তা পরিষ্কারভাবে শোনা যেত না। শব্দভিত্তিক ‘Mayday’ ছিল বেশি কার্যকর ও শ্রুতিস্পষ্ট।


কে ‘Mayday’ কল করতে পারেন?

এই সংকেত শুধুমাত্র পাইলট বা জাহাজের ক্যাপ্টেনই ব্যবহার করতে পারেন – অর্থাৎ কমান্ডার। এটি তখনই ব্যবহার করা হয় যখন:

  • ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়
  • আগুন ধরে যায়
  • বিমান বা জাহাজের নিয়ন্ত্রণ হারায়
  • কোনো যান্ত্রিক ত্রুটি গুরুতর হয়ে দাঁড়ায়
  • হঠাৎ গুরুতর চিকিৎসা সংকট তৈরি হয়
  • যাত্রী ও কর্মীদের জীবন হুমকির মুখে পড়ে

কীভাবে দেওয়া হয় ‘Mayday’ কল?

সংকেতটি তিনবার উচ্চারণ করা হয়: “Mayday, Mayday, Mayday”। এর মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয় যে, সংকেতটি ভুলবশত শোনা নয় বরং বাস্তব বিপদের ইঙ্গিত।


‘Mayday’ কলের পরে কী ঘটে?

১. ফ্রিকোয়েন্সি পরিষ্কার করা হয়:
ATC বা বন্দর কর্তৃপক্ষ সব যোগাযোগ বন্ধ রেখে শুধু বিপদগ্রস্ত যানটির সঙ্গে সংযোগ রাখে।

২. বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ:
সংকেতদাতা জানান দেন – অবস্থান, উচ্চতা, কতজন যাত্রী আছেন, কী বিপদ ঘটেছে, ইত্যাদি।

৩. জরুরি প্রতিক্রিয়া দল সক্রিয়:
উদ্ধারকারী বাহিনী, অগ্নিনির্বাপক এবং চিকিৎসা পরিষেবা একত্রে কাজ শুরু করে।

৪. আইনি বাধ্যবাধকতা:
আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী, যে কেউ এই কল শুনলে এবং সাহায্য করতে সক্ষম হলে তাকে সাহায্য করতে বাধ্য। না করলে শাস্তির মুখে পড়তে হয়।


AI-171 বিমানের ক্ষেত্রে কী ঘটেছিল?

বিমানটি টেক-অফ করার ৫ মিনিটের মধ্যেই সম্ভবত কোনো প্রযুক্তিগত ত্রুটির সম্মুখীন হয়। তখনই ক্যাপ্টেন সুমিত সাভারওয়াল ‘Mayday’ কল করেন। এটি ছিল একমাত্র সুযোগ যাতে কন্ট্রোল টাওয়ার বুঝতে পারে, কিছু ভয়াবহ ঘটতে চলেছে। এই সংকেতের মাধ্যমে বিমানবন্দরের সতর্কতা ব্যবস্থা সক্রিয় হয়।


সংকেত নয়, এক জীবন রক্ষার চেষ্টা

‘Mayday’ শুধুই একটি শব্দ নয় – এটি চূড়ান্ত বিপদের এক আন্তর্জাতিক সংকেত, যেখানে প্রতি সেকেন্ড মূল্যবান। AI-171-এর দুর্ঘটনার পর এই শব্দটি আরও একবার আমাদের মনে করিয়ে দিল, বিমান বা জাহাজ চালানোর মতো অত্যন্ত সুরক্ষিত ব্যবস্থা তবুও বিপদের বাইরে নয়। সংকেতটি প্রতিবারই একটাই বার্তা বহন করে – “আমায় সাহায্য করুন, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব!”

Facebook
Twitter
WhatsApp
Telegram
Email
Print
error: Content is protected !!