হিন্দু পঞ্জিকা অনুযায়ী, বৈশাখ মাস বছরের দ্বিতীয় মাস। ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী, এই মাস থেকেই ত্রেতা যুগের সূচনা হয়েছিল। তাই বৈশাখী অমাবস্যার ধর্মীয় গুরুত্ব বহু গুণ বৃদ্ধি পায়। বিশেষ করে, পিতৃ তর্পণ, পুণ্যস্নান, দান এবং বিশেষ জ্যোতিষীয় উপায় অবলম্বনের জন্য এই দিনটি অতীব শুভ বলে বিবেচিত হয়।
দক্ষিণ ভারতে, এই দিনেই পালন করা হয় শনি জয়ন্তী — শনিদেবের আবির্ভাব দিবস।
বৈশাখী অমাবস্যা ব্রত ও পূজা পদ্ধতি
বৈশাখী অমাবস্যায় সঠিকভাবে ব্রত ও পূজা করলে পিতৃপক্ষের আশীর্বাদ লাভ হয়। এই দিনে পালনীয় গুরুত্বপূর্ণ নিয়মগুলি হল:
- ভোরে উঠে পবিত্র নদী, সরোবর বা কুণ্ডে স্নান করুন। এরপর সূর্যদেবকে জল অর্ঘ্য দিন এবং জলপ্রবাহে তিল বিসর্জন করুন।
- সারাদিন উপবাস রাখুন। পূর্বপুরুষদের উদ্দেশ্যে তর্পণ এবং দানের মাধ্যমে তাদের মুক্তির জন্য প্রার্থনা করুন।
- যেহেতু এই দিনে শনি জয়ন্তীও পড়ে, তাই শনিদেবের পূজা করুন। তিল, তেলের প্রদীপ এবং ফুল অর্পণ করুন।
- সকালে পিপল গাছে জল দিন এবং সন্ধ্যায় প্রদীপ প্রজ্বালন করুন।
- দরিদ্র ও ব্রাহ্মণদের অন্ন, বস্ত্র ও দান করুন নিজের সাধ্যানুযায়ী।
বৈশাখী অমাবস্যার ধর্মীয় কাহিনি
ধর্মীয় শাস্ত্র অনুসারে, একসময়ে এক ধর্মভীরু ব্রাহ্মণ ছিলেন যার নাম ছিল ধর্মবর্ণ। তিনি আশ্রমবাসী সাধুদের সেবা করতেন এবং ধর্মপথে দৃঢ় বিশ্বাসী ছিলেন। একদিন এক সাধুর কাছ থেকে জানতে পারেন যে কলিযুগে বিষ্ণুনামের জপই সর্বশ্রেষ্ঠ সাধনা।
এই জ্ঞান লাভের পর তিনি সংসার ত্যাগ করে সন্ন্যাস গ্রহণ করেন। ভ্রমণরত অবস্থায় তিনি পৌঁছান পিতৃলোকে, যেখানে তার পূর্বপুরুষেরা কষ্টে দিন কাটাচ্ছিলেন। তারা ধর্মবর্ণকে জানান, তার সন্ন্যাসগ্রহণের ফলে পিণ্ডদান বন্ধ হয়েছে এবং তাই তারা দুর্দশায় পড়েছেন।
পূর্বপুরুষেরা অনুরোধ করেন, তিনি যেন আবার গৃহস্থ জীবন গ্রহণ করে সন্তান উৎপাদন করেন এবং বৈশাখী অমাবস্যায় পিণ্ডদান করেন। ধর্মবর্ণ প্রতিজ্ঞা করেন, তিনি তাদের ইচ্ছা পূরণ করবেন। পরে তিনি যথাযথভাবে পিণ্ডদান সম্পন্ন করেন এবং তার পূর্বপুরুষদের মুক্তি প্রদান করেন।
শেষকথা
বৈশাখী অমাবস্যা শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, এটি পিতৃঋণ পরিশোধের এক অনন্য সুযোগ। সঠিক পূজা ও দানপুণ্য আমাদের জীবনে সুখ, সমৃদ্ধি ও শান্তি নিয়ে আসে।
এই বৈশাখী অমাবস্যায় আসুন, আমরা সকলেই আন্তরিকভাবে পিতৃ তর্পণ করি এবং পূর্বপুরুষদের আশীর্বাদে নিজের জীবনকে আলোকিত করি।