নয়া দিল্লি: আমেরিকার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের নতুন শুল্ক নীতির জেরে ভারতীয় অর্থনীতি বড় ধাক্কার মুখে। আজ থেকে কার্যকর হয়েছে আমেরিকার উপর ভারতীয় পণ্যে ৫০% পর্যন্ত শুল্ক। এর সরাসরি প্রভাব পড়তে চলেছে ভারতের একাধিক রফতানি খাতে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এর ফলে রফতানি কমার পাশাপাশি লক্ষ লক্ষ কর্মসংস্থান ঝুঁকির মুখে পড়বে।
কোন কোন শিল্পে পড়বে শুল্কের প্রভাব?
আমেরিকার বাড়তি শুল্কের কারণে ভারত থেকে রফতানির উপর চাপ আসছে একাধিক শিল্পে।
- রত্ন ও গয়না শিল্প: আমেরিকায় দাম বাড়বে, রফতানি কমবে, প্রায় ২ লক্ষ কর্মী চাকরি হারাতে পারেন।
- চর্মজাত শিল্প: ভারতে তৈরি লেদার সামগ্রী রফতানিতে বড় ধাক্কা।
- মৎস্য শিল্প: বিশেষ করে চিংড়ি রফতানিতে বড় আঘাত। প্রায় ৫ লক্ষ চাষির জীবিকা সরাসরি প্রভাবিত, আরও ২৫ লক্ষ মানুষ পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
- বস্ত্র শিল্প: প্রায় ৫ লক্ষ দক্ষ কর্মীর কর্মসংস্থান ঝুঁকির মুখে।
- কৃষিজাত সামগ্রী, কাচ, সেরামিক, কার্পেট ও আসবাব শিল্পেও সরাসরি প্রভাব পড়বে।
অর্থনীতিবিদরা কী বলছেন?
অর্থনীতিবিদ সৈকত সিনহা রায়ের মতে, “শুল্কের কারণে রপ্তানি তৎক্ষণাৎ কমবে। যেসব খাত বেশি ক্ষতিগ্রস্ত, সেগুলো কর্মী নির্ভরশীল, তাই কর্মসংস্থানের সংকট তৈরি হবে।”
অন্যদিকে অর্থনীতিবিদ শৈবাল করের বক্তব্য, “সোনা-রূপার দাম আমেরিকায় বাড়বে, রফতানি কমবে। কর্মসংস্থানও হ্রাস পাবে। তবে ভারত এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসবে।”
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে এক্স-এ লিখেছেন, এই শুল্ক নীতির প্রথম ধাক্কায় প্রায় ২ লক্ষ ১৭ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হতে পারে ভারতের। শুধু তাই নয়, সৌরাষ্ট্র অঞ্চলে হিরে কাটিং ও পালিশ শিল্পে ইতিমধ্যেই এক লক্ষ কর্মী কাজ হারিয়েছেন।
অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জানিয়েছেন, “আমার সরকার কখনও ছোট শিল্প, কৃষক, পশুপালকদের ক্ষতি হতে দেবে না। চাপ যতই আসুক, আমরা সামাল দেব।”
ভারত-আমেরিকা সম্পর্কের ভবিষ্যৎ
শুল্ক নিয়ে দ্বন্দ্ব বাড়লেও আমেরিকার ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট আশাবাদী। তিনি বলেছেন, “ভারত বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র, আমেরিকা বৃহত্তম অর্থনীতি। দিনের শেষে দুই দেশ একত্রিত হব।”
শেষকথা
ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কনীতি ভারতীয় শিল্প ও কর্মসংস্থানের উপর বিরাট প্রভাব ফেলতে চলেছে। রত্ন, গয়না, বস্ত্র, চর্মজাত, মৎস্য ও কৃষি নির্ভর খাতগুলোই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এখন দেখার বিষয়, ভারত সরকার কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক কৌশল দিয়ে এই চ্যালেঞ্জ কতটা সামাল দিতে পারে।