নয়াদিল্লি: পাকিস্তানের বালুচিস্তান প্রদেশের স্বাধীনতার স্বপ্নে বড় ধাক্কা। দীর্ঘদিন ধরে পাকিস্তান সরকার ও সেনাবাহিনীর দমননীতির বিরুদ্ধে সশস্ত্র লড়াই চালানো Baloch Liberation Army (BLA)-কে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদেশি জঙ্গি সংগঠন (Foreign Terrorist Organisation) ঘোষণা করল আমেরিকা। শুধু BLA নয়, তাদের সহযোগী ‘মজীদ ব্রিগেড’-কেও একই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
BLA ও মজীদ ব্রিগেড — আমেরিকার কালো তালিকায়
আমেরিকার বিদেশ সচিব মার্কো রুবিও জানিয়েছেন, ২০১৯ সাল থেকে পাকিস্তানের একাধিক বড়সড় হামলার দায় স্বীকার করেছে BLA, যার মধ্যে মজীদ ব্রিগেডের আত্মঘাতী হামলাও রয়েছে।
২০১৯ সালে প্রথম BLA-কে Specially Designated Global Terrorist (SDGT) সংগঠন ঘোষণা করা হয়েছিল। এবার সেই তালিকায় যুক্ত হল মজীদ ব্রিগেডের নামও।
সাম্প্রতিক হামলা ও ভয়াবহ পরিণতি
আমেরিকার বিদেশ দফতরের তথ্য অনুযায়ী,
- ২০২৪ সালে করাচি বিমানবন্দরের কাছে ও গোয়াদর বন্দরের অথরিটি কমপ্লেক্সে আত্মঘাতী হামলার দায় স্বীকার করে BLA।
- ২০২৫ সালের মার্চে কোয়েট্টা থেকে পেশোয়ারগামী জাফর এক্সপ্রেস ট্রেন হাইজ্যাকের ঘটনায় ৩১ জন নিহত হন এবং ৩০০-রও বেশি যাত্রী পণবন্দি হন।
আমেরিকার বক্তব্য ও পদক্ষেপ
আমেরিকা জানিয়েছে, এই ধরনের হামলা শুধুমাত্র নিরীহ মানুষের জীবন বিপন্ন করছে না, বরং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতাকেও নষ্ট করছে। মার্কো রুবিও বলেন, “সন্ত্রাসের অভিশাপ থেকে বিশ্বকে মুক্ত করতে সন্ত্রাসী সংগঠনকে চিহ্নিত করা অপরিহার্য”।
এই ঘোষণার ফলে —
- সংগঠনের যুক্তরাষ্ট্রে থাকা সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা যাবে।
- যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্র দেশগুলো মিলিতভাবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে পারবে।
সময়টা কেন তাৎপর্যপূর্ণ
BLA-কে সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণার সময়টি বিশেষ নজর কেড়েছে। সম্প্রতি আমেরিকা কাশ্মীরের The Resistance Force (TRF)-কেও বিদেশি জঙ্গি সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করেছে। TRF হল পাকিস্তানি জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈবার একটি শাখা।
পহেলগাঁওয়ে পর্যটকদের উপর হামলার পর ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা বাড়ে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেন, তিনিই দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধবিরতি করিয়েছেন — যদিও ভারত সেই দাবি মানেনি, পাকিস্তান সমর্থন করেছে।
পাকিস্তানের অভিযোগ ও ভারতের প্রতিক্রিয়া
পাকিস্তান অনেক আগে থেকেই BLA-কে জঙ্গি সংগঠন ঘোষণা করেছিল। তাদের দাবি, ভারত গোপনে BLA-কে মদত দেয় — যা দিল্লি স্পষ্টভাবে অস্বীকার করেছে।
BLA-এর অভিযোগ, পাকিস্তান বালুচিস্তানের প্রাকৃতিক সম্পদ লুট করছে, এবং সেখানকার মানুষের উপর বৈষম্য ও নির্যাতন চালাচ্ছে। তাই তারা স্বাধীনতা অর্জনে সশস্ত্র সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে।
বিশ্লেষণ
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই পদক্ষেপের মাধ্যমে আমেরিকা ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে এক ধরনের কূটনৈতিক ভারসাম্য রক্ষা করার চেষ্টা করছে। একইসঙ্গে, দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিতে বালুচিস্তান ইস্যু নতুন মাত্রা পাচ্ছে।