উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশনকে নীরব ঘাতক বলা হয়, কারণ সুস্পষ্ট লক্ষণ দেখা দেওয়ার আগেই এটি হৃদ্রোগ, স্ট্রোক ও কিডনি-রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। সুখবর-হল, ওষুধ ছাড়াও নিত্যদিনের জীবনযাত্রায় সামান্য পরিবর্তন এনে আপনি মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই সিস্টোলিক রক্তচাপ ৫-১৫ মিমি Hg পর্যন্ত কমাতে পারেন।
১. স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস: ‘প্লেট’-এ বদল
- DASH ডায়েট অনুসরণ করুন—বেশি ফল-সবজি, শস্য, বাদাম-ডাল, অল্প-ফ্যাট দুগ্ধ ও লীন প্রোটিন যুক্ত খাবার।
- লবণ ২,৩০০ mg-এর নিচে রাখুন; প্রি-হাইপারটেনশন বা কিডনি-রোগ থাকলে লক্ষ্য ১,৫০০ mg।
- পটাশিয়াম-সমৃদ্ধ খাবার—কলা, শশা, কলাই বা পালং চাপ কমিয়ে ধমনীর স্থিতিস্থাপকতা বাড়ায়।
- সম্পৃক্ত চর্বি ও ট্রান্স ফ্যাট কমান, চিনি-মেশানো পানীয়ও এড়িয়ে চলুন; এগুলি ওজন ও ট্রাইগ্লিসারাইড বাড়ায়।
২. নিয়মিত শারীরিক কার্যকলাপ
- সপ্তাহে কমপক্ষে ১৫০ মিনিট মাঝারি-তীব্র ব্যায়াম (দ্রুত হাঁটা, সাঁতার, সাইক্লিং)।
- HIIT সেশনে ২০ মিনিট করেও একই উপকার মিলতে পারে—এটি স্ট্রোক ভলিউম বাড়িয়ে রক্তচাপ নামায়।
- দীর্ঘক্ষণ বসে থাকলে প্রতি ৩০ মিনিটে একবার দাঁড়িয়ে ২-৩ মিনিট স্ট্রেচ করুন ।
৩. ওজন ও শরীর-গঠন পর্যবেক্ষণ
- BMI ১৮.৫-২৪.৯ সীমায় রাখলে সিস্টোলিক-ডায়াস্টোলিক উভয়ই কমে।
- প্রতিটি ১ কেজি ওজন কমলে গড়ে ১ মিমি Hg রক্তচাপ তফাত দেখা যায়।
৪. মানসিক সুস্থতা ও স্ট্রেস-ম্যানেজমেন্ট
- মাইন্ডফুল ব্রিদিং/ধ্যান প্রতিদিন মাত্র ১০ মিনিট sympathetic টোন কমিয়ে BP নামায়।
- যোগ/ইয়োগা nidra ও Tai Chi বৈজ্ঞানিক-ভিত্তিতে সাপোর্টেড; কর্টিসল কমায়, রেজিস্ট্যান্ট হাইপারটেনশনে উপকারী।
- ডিজিটাল-ডিটক্স – রাতে ঘুমের আগে নীল আলো এড়াতে মোবাইল off রাখুন।
৫. ঘুম: অদৃশ্য ওষুধ
- প্রাপ্তবয়স্কদের দিনে ৭-৯ ঘণ্টা গুণগত ঘুম হৃদ্পিণ্ড পুনরুজ্জীবিত করে।
- নাক ডাকা বা স্লিপ-অ্যাপনিয়া মনে হলে চিকিৎসক-পরামর্শ নিন; অনিয়ন্ত্রিত রক্তচাপের গোপন কারণ হতে পারে।
৬. ধূমপান ও অ্যালকোহল সীমা
- ধূমপান সম্পূর্ণ ছাড়ুন—প্রতিটি সিগারেট ২০ মিনিটের জন্য রক্তচাপ বাড়ায়।
- অ্যালকোহল (বিশেষত ভদকা-হুইস্কি) দিনে পুরুষদের ২ ড্রিঙ্ক, নারীদের ১ ড্রিঙ্ক-এর বেশি নয়।
৭. নিয়মিত রক্তচাপ পরীক্ষা
- বাড়িতে যাচাই করতে ডিজিটাল BP মনিটর ব্যবহার করুন; একই সময়ে, একই হাতে, বসা অবস্থায় তিনবার পরিমাপ করে গড় নিন।
- ফলাফলের রেকর্ড রাখুন ও সন্দেহ হলে ডাক্তারের সঙ্গে শেয়ার করুন। এতে ‘হোয়াইট কোট হাইপারটেনশন’ ধরা পড়ে সহজে।
উচ্চ রক্তচাপ নীরব হলেও প্রতিরোধ – বলার মতোই সহজ—খাদ্য, চলাচল, মানসিক স্বস্তি ও ঘুমের বৈজ্ঞানিক চার-স্তম্ভকে পরিপূর্ণভাবে সঞ্জীবিত করলেই আপনার হৃদয় পাবে নতুন আবরণ। আজ থেকেই একটি ছোট লক্ষ্য ঠিক করুন—হোক লবণ কমানো বা ৩০-মিনিট হাঁটা—এবং ধীরে-ধীরে চোখে পড়ার মতোই দেখুন আপনার রক্তচাপ কেমন নিয়ন্ত্রণে আসে। সুস্থ থাকুন, সচেতন থাকুন।
লেখাটি শুধুমাত্র শিক্ষামূলক উদ্দেশ্যে। ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য-পরামর্শের জন্য নিকটস্থ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
Post Views: 60