কলকাতা: সমাজমাধ্যমে ঝড় তুলেছেন পরিচিত ফেস সোহিনী গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর গর্ভাবস্থা নিয়ে নিয়মিত ভিডিও পোস্ট, ট্রোলিং, আবার প্রশংসা— সব মিলিয়ে আলোচনায় ছিলেন তিনি। কিন্তু সম্প্রতি ঘটে যাওয়া তাঁর গর্ভপাতের পর চর্চা আরও বাড়ল নেটদুনিয়ায়। একদল বলছেন— “নজর লেগেছে!”, অন্যদিকে চিকিৎসকেরা সরব হয়েছেন অন্ধবিশ্বাসের বিরুদ্ধে।
সোহিনীর প্রেগন্যান্সি থেকে ট্রোলিং পর্যন্ত
গত কয়েক মাস ধরে নিজের প্রেগন্যান্সির অভিজ্ঞতা শেয়ার করছিলেন সোহিনী। বেবি বাম্পে জগন্নাথদেব আঁকানো ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর তিনি যেমন তারিফ পেয়েছিলেন, তেমনি তীব্র ট্রোলিংয়েরও শিকার হন। কিন্তু গর্ভপাতের খবর প্রকাশ্যে আসতেই সোশ্যাল মিডিয়ায় শুরু হয়েছে দুই ভাগে বিতর্ক।
একদল নেটিজেন দাবি করেছেন— প্রেগন্যান্সির এত খুঁটিনাটি প্রকাশ করায় সোহিনীর “নজর” লেগেছে। অপর দল আবার চিকিৎসকের গাফিলতির অভিযোগ তুলেছেন।
চিকিৎসক-পরিবারের পাল্টাপাল্টি বক্তব্য
সোহিনীর এক আত্মীয়া ভিডিও পোস্টে চিকিৎসকের বিরুদ্ধে সরব হন। এর পরেই সোহিনীর চিকিৎসক শিবেন্দ্রনাথ দাস সোশ্যাল মিডিয়ায় জানান— তাঁর কনসিল্ড অ্যাক্সিডেন্টাল হেমারেজ হয়েছিল। অবস্থার অবনতি হওয়ায় শেষমেশ সিজারিয়ান অপারেশন করতে বাধ্য হন তিনি।
চিকিৎসকের কঠোর প্রতিক্রিয়া
এই নিয়ে গাইনিকোলজিস্ট ও কনসালট্যান্ট সাইকিয়াট্রিস্ট ডা. অরুণিমা ঘোষ তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য—
- “অশিক্ষিত সমাজ নয়, শিক্ষিত প্রজন্মও কুসংস্কার ছড়াচ্ছে, এটা অত্যন্ত দুঃখজনক।”
- “গর্ভপাত একটি দুর্ঘটনা, যেকোনও মায়ের সঙ্গেই ঘটতে পারে। এর সঙ্গে ‘নজর’ বা গোপনীয়তা রক্ষার কুসংস্কারের কোনও সম্পর্ক নেই।”
- “CS (Caesarean Section) কোনো ছেলেখেলা নয়। ডাক্তার পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নেন। অযথা ব্যক্তিগত আক্রমণ হলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।”
নেটদুনিয়ায় তীব্র প্রতিক্রিয়া
এখন প্রশ্ন উঠছে— সোশ্যাল মিডিয়া কি সত্যিই “সেলিব্রিটি মায়েদের” প্রেগন্যান্সিকে অতিরিক্ত এক্সপোজারে ঠেলে দিচ্ছে? নাকি এই সমস্ত কুসংস্কার ও অন্ধবিশ্বাসই মানুষের কাছে বেশি আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে?
উপসংহার
সোহিনীর গর্ভপাত ঘিরে এই বিতর্কে আবারও সামনে এল এক নতুন বাস্তবতা— আধুনিক চিকিৎসার যুগেও মানুষ কুসংস্কার থেকে বেরোতে পারছে না। চিকিৎসকদের মতে, গর্ভাবস্থা নিয়ে সচেতনতা ও মেডিক্যাল সাপোর্টই এখানে একমাত্র ভরসা, “নজর” নয়।