দুর্গাপুজো ২০২৫ শুরু হতে বাকি !!

Days
Hours
Minutes
Seconds

রথযাত্রা ২০২৫: জগন্নাথদেবকে কেন অর্পণ করা হয় ছাপান্ন ভোগ? রাজকীয় ভোগের ইতিহাস ও সম্পূর্ণ তালিকা

রথযাত্রা ২০২৫: জগন্নাথদেবকে কেন অর্পণ করা হয় ছাপান্ন ভোগ? রাজকীয় ভোগের ইতিহাস ও সম্পূর্ণ তালিকা

📌 নিউজ ডেস্ক | রথযাত্রা ২০২৫

রথের দিনগুলিতে (Rath Yatra 2025) ওড়িশার পুরীতে জগন্নাথধামে হয় এক অনন্য ধর্মীয় উৎসবের আয়োজন। বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম এই হিন্দু উৎসব শুধুই রথ টানার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। বহু উপাচারের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল জগন্নাথদেবকে ছাপান্ন ভোগ (Chappanna Bhog) নিবেদন। ভক্তি, সংস্কার ও খাদ্য ঐতিহ্যের অপূর্ব মেলবন্ধন এই ভোগ।

🔷 ছাপান্ন ভোগের পেছনের পুরাণকথা

পুরাণ অনুযায়ী, ছোটবেলায় মা যশোদা প্রতিদিন আট প্রহরে বালক কৃষ্ণকে খাবার খাওয়াতেন। একসময় যখন ইন্দ্রের রোষে বৃষ্টি ও মহাপ্রলয়ের সৃষ্টি হয়, তখন কৃষ্ণ তাঁর কনিষ্ঠ আঙুলে গোবর্ধন পাহাড় তুলে টানা সাত দিন ধরে গ্রামবাসীদের আশ্রয় দিয়েছিলেন।

রথযাত্রা ২০২৫: জগন্নাথদেবকে কেন অর্পণ করা হয় ছাপান্ন ভোগ? রাজকীয় ভোগের ইতিহাস ও সম্পূর্ণ তালিকা

সেই সময় তিনি কিছু খাননি, এমনকি একফোঁটা জলও স্পর্শ করেননি। প্রলয় বন্ধ হওয়ার পর যশোদা অনুভব করেন, যে সন্তান দিনে আটবার খায়, সে সাতদিন অনাহারে ছিল—এ কথা ভাবতেই তাঁর হৃদয় কেঁদে ওঠে। তখন যশোদা ও ব্রজবাসীরা ৭ দিন × ৮ প্রহর = ৫৬টি পদ রান্না করে কৃষ্ণকে নিবেদন করেন।

এই বিশ্বাস থেকেই ভগবান নারায়ণ তথা তাঁর অবতার জগন্নাথদেবকে নিবেদন করা হয় ছাপান্ন ভোগ

🔷 জগন্নাথদেব ও ছাপান্ন ভোগ

ভগবান বিষ্ণুর দশ অবতারের মধ্যে অন্যতম হলেন শ্রীকৃষ্ণ। পুরাণ মতে, জগন্নাথদেবকে বিষ্ণুর অবতার হিসেবে পূজা করা 🕉️ ভগবান বিষ্ণুর চার ধাম যাত্রা ও পুরীতে ভোজনের মাহাত্ম্য

অন্য একটি কাহিনিতেও ছাপান্ন ভোগের তাৎপর্য স্পষ্ট হয়ে ওঠে। পুরাণ অনুসারে, ভগবান বিষ্ণু মর্ত্যে এসে চারটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে যাত্রা করেন, যেগুলো পরিচিত “চার ধাম” নামে—

  1. বদ্রীনাথ (হিমালয়) – এখানে তিনি স্নান করেন
  2. দ্বারিকা (গুজরাট) – এখানে তিনি বস্ত্র ধারণ করেন
  3. পুরী (ওড়িশা) – এখানে তিনি ভোজন করেন
  4. রামেশ্বরম (দক্ষিণ ভারত) – এখানে তিনি বিশ্রাম নেন

যেহেতু পুরীতেই তিনি ভোজন করেন, তাই এই স্থানে নিবেদন করা ভোগে থাকে রাজকীয়তা ও পবিত্রতার পূর্ণ প্রকাশ।

রথযাত্রা ২০২৫: জগন্নাথদেবকে কেন অর্পণ করা হয় ছাপান্ন ভোগ? রাজকীয় ভোগের ইতিহাস ও সম্পূর্ণ তালিকা
পুরীর জগন্নাথ মন্দির

পুরাণ মতে, জগন্নাথদেব হলেন ভগবান বিষ্ণুর অষ্টম অবতার শ্রীকৃষ্ণের প্রকাশ। জগন্নাথদেবের মধ্যে বিষ্ণুর সকল অবতারের চিহ্ন বিদ্যমান। তাই তাঁকে নিবেদন করা ভোগও হয় তদ্রূপ বিশিষ্ট ও বৃহৎ।


🔷 ভোগ তৈরির নিয়ম

পুরীর মন্দিরে ভোগ তৈরি হয় বিশেষ নিয়মে—

  • কাঠের চুলায়, মাটির হাঁড়িতে রান্না হয়
  • নিরামিষ ও লৌকিক উপকরণে তৈরি
  • ভোগ কখনো চেখে দেখা হয় না
  • রান্নার সময় সম্পূর্ণ পবিত্রতা রক্ষা করা হয়

এই ভোগ প্রথমে অর্পণ করা হয় মহালক্ষ্মী ও ভোগগৃহে, তারপর প্রধান মন্দিরে জগন্নাথ, বলভদ্র ও সুভদ্রাকে নিবেদন করা হয়।

রথযাত্রা ২০২৫: জগন্নাথদেবকে কেন অর্পণ করা হয় ছাপান্ন ভোগ? রাজকীয় ভোগের ইতিহাস ও সম্পূর্ণ তালিকা

🔷 ছাপান্ন ভোগে কী কী পদ থাকে?

নীচে দেওয়া হল ঐতিহ্যবাহী ৫৬টি পদের তালিকা যা রথযাত্রায় জগন্নাথদেবকে অর্পণ করা হয়—

উকখুড়া(মুড়ি), নাড়িয়া কোড়া(নারকেল নাড়ু), খুয়া(খোয়া ক্ষীর), দই, পাচিলা কদলি(পাকা কলা), কণিকা(সুগন্ধী ভাত), টাটা খিচুড়ি(শুকনো খিচুড়ি), মেন্ধা মুণ্ডিয়া(বিশেষ কেক), বড়া কান্তি(বড় কেক), মাথা পুলি(পুলি পিঠে), হামসা কেলি(মিষ্টি কেক), ঝিলি(প্যান কেক), এন্ডুরি(নারকেল কেক), আদা পচেদি(আদা চাটনি), শাক ভাজা, মরিচ লাড্ডু(লঙ্কার লাড্ডু), করলা ভাজা, ছোট্ট পিঠে, বড়া(দুধ মিষ্টি), আরিশা(ভাতের মিষ্টি), বুন্দিয়া(বোঁদে), পাখাল(পান্তা ভাত), খিরি(পায়েস), কাদামবা(বিশেষ মিষ্টি), পাত মনোহার, তাকুয়া, ভাগ পিঠে, গোটাই(নিমকি), দলমা(ভাত-সবজি মিশ্রণ), কাকারা, লুনি খুরুমা(নোনতা বিস্কুট), আমালু(মিষ্টি লুচি), বিড়ি পিঠে, চাড়াই নাডা, খাস্তা পুরি, কদলি বড়া, মাধু রুচি(মিষ্টি চাটনি), সানা আরিশা(রাইস কেক), পদ্ম পিঠে, পিঠে(সাধারণ), কানজি(বিশেষ চালের মিষ্টি), দাহি পাখাল(দই ভাত), বড় আরিশা, ত্রিপুরি, সাকারা(সুগার ক্যান্ডি), সুজি ক্ষীর, মুগা সিজা, মনোহরা, মাগাজা লাড্ডু, পানা, অন্ন, ঘি ভাত, ডাল, বেসর(সবজি), মাহুর(লাবরা), সাগা নাড়িয়া (নারকেলের দুধে ভাত)।

রথযাত্রা ২০২৫: জগন্নাথদেবকে কেন অর্পণ করা হয় ছাপান্ন ভোগ? রাজকীয় ভোগের ইতিহাস ও সম্পূর্ণ তালিকা

ছাপান্ন ভোগ শুধুই খাদ্য নয়—এ এক পূর্ণাঙ্গ আধ্যাত্মিক অভিব্যক্তি। প্রতিটি পদে লুকিয়ে আছে ভক্তির গভীরতা, পুরাণের মাহাত্ম্য এবং ভারতের খাদ্য-ঐতিহ্যের গর্ব। রথযাত্রার দিন এই ৫৬টি পদে দেবতাকে ভোজন করিয়ে ভক্তেরা যেন নিজেরাও তৃপ্ত হন ঈশ্বরের আশীর্বাদে।

Facebook
Twitter
WhatsApp
Telegram
Email
Print
error: Content is protected !!