রানাঘাট, ১৯ জুন — এক অসাধ্য সাধনের নাম আজ অস্মিকা দাস! স্পাইনাল মাসকুলার অ্যাট্রপি (SMA) নামক এক বিরল ও প্রাণঘাতী রোগে আক্রান্ত রানাঘাটের এক বছরের শিশু অস্মিকা আজ জীবনের নতুন আলো দেখতে পেল। শুধুমাত্র সাধারণ মানুষের ভালোবাসা, সংহতি ও দানের জোরেই সম্ভব হল বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল জিন থেরাপি ‘জোলজেনসমা’-র মাধ্যমে তার চিকিৎসা।
মাত্র ৭ মাসে দেশ-বিদেশের প্রায় ৬৫ হাজার মানুষ এগিয়ে এসে অস্মিকার চিকিৎসার জন্য তহবিল গড়ে তোলেন। সংগ্রহ হয় ৯ কোটি টাকারও বেশি। অবশেষে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ১৬ কোটির ইঞ্জেকশন ‘জোলজেনসমা’ সফলভাবে প্রয়োগ করা হয়েছে।
কি এই জিন থেরাপি?
‘জোলজেনসমা’ হল এমন একটি জিন থেরাপি, যা SMA রোগে আক্রান্ত শিশুর শরীরে দুর্বল হয়ে পড়া স্নায়ু কোষে নতুন কার্যকরী জিন প্রবেশ করিয়ে তা সুস্থ করে তোলে। SMA এমন একটি জটিল ও বিরল রোগ, যাতে ধীরে ধীরে শিশুদের মাংসপেশি ও স্নায়ু অকেজো হয়ে যায়, এবং শিশুর স্বাভাবিক চলাফেরা ও শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা দেখা দেয়। এই রোগের একমাত্র চিকিৎসা হল এই অত্যন্ত ব্যয়বহুল জিন থেরাপি।
রাজ্যবাসীর ঐক্য ও মানবিকতার জয়
অস্মিকার মা-বাবা, শুভঙ্কর ও সুস্মিতা দাস যখন বুঝলেন মেয়ের চিকিৎসা অসম্ভব ব্যয়বহুল, তখন তাঁরা সাধারণ মানুষের দ্বারস্থ হন। সোশ্যাল মিডিয়া, সংবাদমাধ্যম ও বিভিন্ন সংস্থার সহায়তায় ছড়িয়ে পড়ে অস্মিকার কথা। সাড়া দেয় দেশের নানা প্রান্ত থেকে হাজারো মানুষ। কেউ ১০ টাকা, কেউ ১০ হাজার— যতটুকু পেরেছেন দিয়েছেন। অবশেষে সেই অর্থে চিকিৎসার পথ খুলে যায়।
অস্মিকার বাবার কথায়,
“সাধারণ মানুষের সহযোগিতা ছাড়া এই চিকিৎসা আমরা কোনোদিন সম্ভব করে তুলতে পারতাম না। আজ যারা আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন, তারা আমাদের মেয়েকে নতুন জীবন দিয়েছেন।”
সফলভাবে প্রয়োগ ইঞ্জেকশন
কলকাতার এক নামী বেসরকারি হাসপাতালে শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. সংযুক্তা দে ও তাঁর বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত টিমের তত্ত্বাবধানে অস্মিকার শরীরে জিন থেরাপি প্রয়োগ করা হয়েছে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, চিকিৎসা সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে এবং এখন থেকে ধাপে ধাপে তার শারীরিক উন্নতি ঘটবে।
আশার আলো
চিকিৎসকরা মনে করছেন, জিন থেরাপির পর সঠিক ফিজিওথেরাপি ও পুষ্টি চিকিৎসায় অস্মিকা ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবে। আপাতত কয়েকদিন পর্যবেক্ষণে রাখা হবে তাকে।
এই ঘটনা আবার প্রমাণ করে দিল, মানবিকতা, সংবেদনশীলতা ও ঐক্য থাকলে কোনও অসম্ভবকেও সম্ভব করে তোলা যায়। ছোট্ট অস্মিকার জীবন ফিরিয়ে আনার এই যাত্রা আগামী প্রজন্মের কাছে একটি উদাহরণ হয়ে থাকবে।