দুর্গাপুজো ২০২৫ শুরু হতে বাকি !!

Days
Hours
Minutes
Seconds

জামাইষষ্ঠীর দুপুরে রবিঠাকুর

জামাইষষ্ঠীর দুপুরে রবিঠাকুর

সময়টা উনিশশো তিন। জায়গাটা অবিভক্ত বাংলাদেশ।
গ্রীষ্মের দুপুর। গরমে তপ্ত ঘরের মধ্যে কোথাও যেন মেখে আছে তালপাতার হাতপাখার হাওয়ার ঠান্ডা ছোঁয়া আর রসনা তৃপ্তির প্রতীক্ষা।

আজ জামাইষষ্ঠী। আর এই বিশেষ দিনে জামাই হিসেবে নিমন্ত্রিত এক জন বিশেষ ব্যক্তি—ごরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
শাশুড়ি মশাই, দাক্ষায়ণী দেবী, নিজে রাঁধুনিদের তত্ত্বাবধানে রাঁধছেন একের পর এক পদ—চারবেলাই চর্ব্য, চোষ্য, লেহ্য, পেয়—সবকিছুর আয়োজন। তবে দুপুরের খাবারটাই তো আসল আকর্ষণ!

দীর্ঘদেহী, ধুতি-পাঞ্জাবিতে সজ্জিত জামাই ঠাকুর বসেছেন পাত পেতে। গৃহভৃত্য উমাচরণ এক কোণে দাঁড়িয়ে। শাশুড়ি নিজে দাঁড়িয়ে আছেন পরিবেশন করতে।

“এই যে জামাইবাবু, আগে তেতো দিয়ে শুরু করুন।”
শাশুড়ি মৃদু হেসে বললেন।

“তেতো? কোথায়?”
রবিঠাকুর একটু অবাক। শাশুড়ি আঙুল তুলে দেখিয়ে দিলেন এক বাটিতে থাকা উচ্ছে-ভাজা।

একটু মেখে মুখে দিয়েই কবি মুগ্ধ—
“উচ্ছে তো বুঝলাম, কিন্তু তেতোটা বেশ অন্যরকম। ঘি-করলার স্বাদই আলাদা।”

“আর একটা তেতো আছে, কাঁকরোল—যাকে তোমরা কলকাতায় ঘি-করলা বলো।”
শাশুড়ি গর্বের সুরে বললেন।

এরপর একে একে এল সোনামুগ ডালের সঙ্গে নারকেল, পাঁচরকম ভাজা—আলু, কুমড়ো, বেগুন, পটল, ঝিঙে।
তারপর মোচার ঘাঁট, লাউ-ছানার নতুন পদ।

রবিঠাকুর খাচ্ছেন ধীরে ধীরে, একটু একটু করে।
ভাতের পরিমাণ কম, কিন্তু প্রতিটি পদে তার মুগ্ধতা চোখে পড়ার মতো।

এমন সময়…

“এইটা চেনো?”
শাশুড়ি বাটির দিকে ইশারা করলেন।

“এটা তো… চৈ দিয়ে কৈ মাছ?”
রবি ঠাকুরের চোখ একটু চাওয়াচাওয়ি করে গেল।

“আমিষ তো এখন খাই না… ভাবছিলাম…”

শাশুড়ি হঠাৎ গম্ভীর, কণ্ঠটা ভারী হয়ে উঠলো—
“আমি নিজের হাতে বানালাম, আর তুমি খাবে না? ওই ‘চৈ’ জিনিসটা তো তোমাদের শহরে নেই।”

রবিঠাকুর কিছুক্ষণ চুপ।
তারপর মাথা নিচু করে বললেন,
“থাক। সরানোর দরকার নেই… আমি খাচ্ছি।”

চুপচাপ খেতে খেতে যেন কোথায় হারিয়ে গেলেন স্মৃতির ভেতর। বললেন,
“এই রান্নাটা আমি আগে খেয়েছি… ঠিক এইরকমই। ওর কাছেই…”

কথাটা কে বোঝে? শাশুড়ি? না উমাচরণ?

উমাচরণ তো বিস্ময়ে হতবাক!
“মা-ঠাকরুণ চলে যাওয়ার পরে ওনাকে একবেলা আমিষ খাওয়ানো যায়নি! আর আজ শাশুড়ির কথায় অবলীলায় কৈ মাছ খেয়ে ফেললেন?”

এই গল্প কেবল খাবারের নয়—এ এক পারিবারিক আবেগ, স্মৃতি, সম্পর্ক আর বাঙালির ভোজনসংস্কৃতির অনন্য দলিল।
রবীন্দ্রনাথের মতো মনীষীও যে আত্মার টানে, স্মৃতির টানে, একদিন শাশুড়ির হাতের কৈ মাছ খেয়ে ফেলেন—এটাই তো বাঙালির চিরন্তন ‘জামাইষষ্ঠী’র আসল গল্প।


আজকের দিনে এই গল্প যেন আমাদের মনে করিয়ে দেয়—সম্পর্কের আসল স্বাদ লুকিয়ে থাকে শুদ্ধ অভ্যর্থনা আর আন্তরিকতায়। শুভ জামাইষষ্ঠী! 🌿

Facebook
Twitter
WhatsApp
Telegram
Email
Print
আরও পড়ুন
error: Content is protected !!