বুধবার, ২৮ জানুয়ারি, ২০২৫, প্রয়াগরাজের মহাকুম্ভ মেলাতে ঘটে এক ভয়াবহ পদপিষ্টের ঘটনা। কোটি কোটি মানুষের ভিড়ের মধ্যে একাধিক পুণ্যার্থী আহত হয়েছেন এবং বেশ কিছু মৃত্যুর আশঙ্কা করা হচ্ছে। মহাকুম্ভের এই ঘটনা এবার সারা দেশে শোকের ছায়া ফেলেছে। তবে, এই বিপর্যয়ের পিছনে কী কারণ ছিল এবং কীভাবে এটি ঘটল, তা আমরা জানবো এই প্রতিবেদনে।
মহাকুম্ভে ভয়াবহ পদপিষ্টের ঘটনা: এক চরম দুর্ঘটনা
প্রয়াগরাজের মহাকুম্ভ মেলা, যেখানে প্রতিটি বছর কোটি কোটি মানুষ পুণ্যস্নানে অংশ নেন, এবার অত্যন্ত বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। বুধবারের শাহি স্নান চলাকালীন গঙ্গা, যমুনা, এবং অন্তঃসলিলা সরস্বতী—এই তিন নদীর সঙ্গম স্থলে এক ভয়াবহ পদপিষ্টের ঘটনা ঘটে। শত শত পুণ্যার্থী স্নান করতে আসেন, কিন্তু ভিড়ের চাপে ব্যারিকেড ভেঙে পড়ে যান অনেকে। এর ফলে, বহু পুণ্যার্থী মাটিতে চাপা পড়ে যান, যার মধ্যে অনেকের অবস্থা অত্যন্ত সংকটজনক।
ধাক্কাধাক্কি ও হুড়োহুড়ির পরিস্থিতি
বিবেক মিশ্র নামের এক পুণ্যার্থী জানান, ‘‘রাত আড়াইটে নাগাদ প্রচুর মানুষ সঙ্গমের তীরে এসে পৌঁছেছিলেন। অনেকেই মাথায় ভারী মালপত্র নিয়ে এসেছিলেন স্নান করতে। একে অপরকে ধাক্কা দিয়ে এগোতে গিয়ে কিছু লোহার ডাস্টবিনের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে অনেকে পড়ে যান।’’ পুণ্যার্থীরা হুড়োহুড়ি করতে গিয়ে দিশাহীন হয়ে পড়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে কোন পথেই আগানো যাবে, সেটা জানার কোনও উপায় ছিল না। ফলে একের পর এক মানুষ পড়ে যান, এবং ভিড়ের চাপে আরও অনেকেই আহত হন।
রাম সিংহের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা
ফতেহপুরের বাসিন্দা রাম সিংহ তাঁর অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে বলেন, ‘‘ভিড়ের মধ্যে পড়ে আমি পায়ে আঘাত পেয়েছিলাম। সাহায্যের জন্য চিৎকার করেও কেউ এগিয়ে আসেননি।’’ তাঁর ভাষায়, ‘‘ভিড়ের মধ্যে কেউ যদি একে অপরকে সাহায্য করত, তাহলে এই বিপদ এড়ানো যেত।’’ তবে এক পুলিশকর্মীর সাহায্যে তিনি হাসপাতালে পৌঁছান।
Live incident in Mahakumbh 🥺#MahakumbhStampede#मौनी_अमावस्या #MahaKumbh2025#भगदड़
— Rohitnat!On🏆 (@goat_rohit45) January 29, 2025
https://t.co/uBSJvuUhki
পদপিষ্টের ঘটনার পর রাজ্য সরকারের প্রতিক্রিয়া
পদপিষ্টের ঘটনার পর, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং সব ধরনের সাহায্যের আশ্বাস দেন। রাজ্য এবং জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী উদ্ধারকাজে নিয়োজিত হয়েছে এবং পরিস্থিতি যাতে আরও খারাপ না হয়, তার জন্য র্যাফ এবং এনএসজি-র দলও ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়েছে।
মহাকুম্ভ মেলার জন্য ভবিষ্যতে করণীয়
এই বিপর্যয়ের পর প্রশ্ন ওঠে, মহাকুম্ভ মেলায় এমন পরিস্থিতি কেন তৈরি হলো? প্রশাসন ও আয়োজকদের উচিত, ভবিষ্যতে ভিড় নিয়ন্ত্রণের জন্য আরও কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া। সঠিক দিকনির্দেশনা, পর্যাপ্ত ব্যারিকেড, এবং নিরাপত্তার আরও কড়া ব্যবস্থা জরুরি হয়ে পড়েছে। এ ধরনের দুর্ঘটনা যেন আর না ঘটে, তার জন্য সরকারের পাশাপাশি পুণ্যার্থীদেরও সচেতন হতে হবে।
মহাকুম্ভের মতো পবিত্র স্থানে এই ধরনের বিপদজনক ঘটনা কোনওভাবেই কাম্য নয়। সরকারের উচিত, ভবিষ্যতে এমন পরিস্থিতি এড়াতে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা। আমাদের সকলের দায়িত্ব, এই ধরনের দুর্ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। আশা করা যায়, প্রশাসন আরও সচেতন হয়ে আগামী দিনে এই ধরনের বিপদ এড়াতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
সতর্কতা এবং সচেতনতার মাধ্যমে আমরা সবাই এই মহাকুম্ভ মেলাকে আরও নিরাপদ এবং সুন্দর করে তুলতে পারি।