কলকাতা: বাংলার ‘ইন্ডাস্ট্রি’ বলতে এখনও যাঁর নাম প্রথম মাথায় আসে, সেই প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের নাম জড়িয়ে গেল বিতর্কে। সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, জাতীয় স্তরের এক সাংবাদিক সম্মেলনে এক সাংবাদিক বাংলায় প্রশ্ন করলে, তাঁকে ইংরেজি বা হিন্দিতে প্রশ্ন করতে বলেন অভিনেতা। এরপরেই উত্তাল নেটদুনিয়া—প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় কি তবে নিজের মাতৃভাষাকেই অপমান করলেন?
ভিডিওটি ভাইরাল হতেই শুরু হয় তীব্র ট্রোলিং। অনেকেই তাঁকে ‘বাঙালিত্ব বিসর্জন দেওয়া’ বলে কটাক্ষ করেন। কিন্তু বিতর্ক বাড়তেই এবার মুখ খুললেন খোদ প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। ৪২ বছর ধরে বাংলা চলচ্চিত্র জগতে কাজ করা এই অভিনেতা তাঁর সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে জানালেন পুরো ঘটনার প্রেক্ষাপট।
প্রসেনজিতের ব্যাখ্যা কী?
তিনি লেখেন, “১ জুলাই মুম্বইয়ের জুহু পিভিআরে একটি হিন্দি সিনেমার ট্রেলার লঞ্চে উপস্থিত ছিলাম। মঞ্চে থাকা সবাই ইংরেজি ভাষায় কথা বলছিলেন। বাংলার এক পরিচিত সাংবাদিক বাংলায় প্রশ্ন করলে, আমার মনে হয়েছিল, ওখানে থাকা দর্শকদের অনেকেই বিষয়টি বুঝবেন না। তাই আমি বলেন, ‘বাংলায় কেন প্রশ্ন করছেন?’ যদিও এতে আমার কোনও অবজ্ঞার মনোভাব ছিল না। কিন্তু ক্লিপিংসে শুধুমাত্র ওই একটি বাক্যই প্রচারিত হয়েছে, যার ফলে অনেকে আঘাত পেয়েছেন।”
তিনি আরও বলেন, “বাংলা আমার প্রাণের ভাষা, ভালবাসার ভাষা। এই ভাষাকে অপমান করা আমার দুঃস্বপ্নেও আসে না। হয়তো আমার বক্তব্যের অভিব্যক্তিতে ঘাটতি ছিল, যার ফলে ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হয়েছে। আমি সত্যিই দুঃখিত।”
ট্রোলিংকে কীভাবে দেখছেন অভিনেতা?
সোশ্যাল মিডিয়ায় চলা বিতর্ক প্রসঙ্গে প্রসেনজিৎ লেখেন, “জীবনের শেষদিন পর্যন্ত বাংলা ও বাংলার মানুষের প্রতি আমার শ্রদ্ধা অটুট থাকবে। কিন্তু বুঝতে পেরেছি, আমার কথায় অনেকেই কষ্ট পেয়েছেন। আমি আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি।”
নেটিজেনদের প্রতিক্রিয়া কেমন?
প্রসেনজিতের বিবৃতি প্রকাশ্যে আসার পর বহু অনুরাগী তাঁর সমর্থনে এগিয়ে এসেছেন। অনেকেই লেখেন, “বুম্বাদা কখনও বাংলা অপমান করতে পারেন না”, “ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল, এবার সব পরিষ্কার”, আবার কেউ কেউ বলেন, “মঞ্চ যাই হোক, বাংলা ভাষা আমাদের গর্ব।”
তবে কিছু অংশ এখনও তাঁর অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। তাঁদের বক্তব্য, “জাতীয় মঞ্চেই তো বাংলা ভাষার গৌরব ছড়ানো উচিত ছিল।”
ভাষা নিয়ে বিতর্ক খুবই সংবেদনশীল বিষয়, বিশেষ করে যখন তা জড়িয়ে থাকে কোনও সাংস্কৃতিক পরিচয়ের সঙ্গে। প্রসেনজিতের মতো আইকনের মুখে এমন মন্তব্য অবশ্যই চমকে দিয়েছিল অনেককে। তবে তাঁর পরিষ্কার ব্যাখ্যা ও দুঃখপ্রকাশ নিঃসন্দেহে পরিস্থিতিকে শান্ত করেছে। বাংলার প্রতি তাঁর ভালোবাসা বারবার প্রকাশ পেয়েছে তাঁর কাজ ও কথায়—এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি।