বাংলায় ২০২৬ সালের বিধানসভা ভোটের ঠিক এক বছর আগেই শুরু হয়ে গেল ‘সিঁদুর’ যুদ্ধ। ‘অপারেশন সিঁদুর’ প্রসঙ্গ ঘিরে উত্তাল হল বাংলা রাজনীতি। একদিকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বক্তব্যে উঠে এল জাতীয় নিরাপত্তা ও সন্ত্রাসবাদ দমন, অন্যদিকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেই প্রসঙ্গকেই রাজনৈতিক প্রচার বলে তীব্র কটাক্ষ করলেন।
মোদীর হুঙ্কার: ‘সিঁদুর’ নিয়ে জঙ্গিদের বার্তা
বৃহস্পতিবার বাংলার আলিপুরদুয়ারে এক জনসভায় মোদী বলেন, “এই সিঁদুরখেলার মাটিতে দাঁড়িয়ে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ভারতের পদক্ষেপের কথা বলা স্বাভাবিক। জঙ্গিরা আমাদের বোনেদের সিঁদুর মুছে দিতে চেয়েছিল, কিন্তু আমাদের সেনা তা ফিরিয়ে দিয়েছে।”
এখানেই থেমে না থেকে তিনি তুলে আনলেন ১৯৭১ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ, পাকিস্তানি সেনার বর্বরতা, নারী নিগ্রহ ও বাংলাদেশ সৃষ্টির পটভূমি।
তৃণমূলের প্রত্যাঘাত: ‘সিঁদুর’ বিক্রি নয়, এটা আত্মসম্মান
প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের পরেই কড়া জবাব দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বললেন, “সিঁদুর বিক্রি হয় না, এটা আমাদের মা-বোনেদের আত্মসম্মান। আপনি কি এবার সিঁদুর বেচতে এসেছেন?”
তিনি মোদীকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলেন, “পারলে কালকেই ভোট করুন, দেখে নিন বাংলা কাকে চায়।”
বিদেশ সফরে অভিষেক, তবু কেন নীরব মোদী?
তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বর্তমানে একটি সর্বদলীয় প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বিদেশ সফরে রয়েছেন। জাপান, কোরিয়া, সিঙ্গাপুর ও ইন্দোনেশিয়ায় ভারতের হয়ে সন্ত্রাসবাদ বিরোধী বার্তা দিচ্ছেন তিনি।
মমতার প্রশ্ন, “দেশের প্রতিনিধি হিসেবে তৃণমূলের সাংসদ সন্ত্রাসবাদ বিরোধী বার্তা ছড়াচ্ছেন, অথচ মোদী তাঁর নামটিও উল্লেখ করলেন না কেন?”
রাজনৈতিক পরিপ্রেক্ষিত: শুরু হল ভোটের প্রস্তুতি?
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই উত্তেজনা ও রাজনৈতিক বাগ্যুদ্ধ ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারের সূচনা বলেই ইঙ্গিত দিচ্ছে। কেন্দ্র বনাম রাজ্য, বিজেপি বনাম তৃণমূলের দ্বৈরথ এখন আরও প্রকট হচ্ছে।
সেনার সম্মান নিয়ে একমত হলেও বিভাজনের রাজনীতি তীব্র
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, ভারতীয় সেনার সাফল্য কোনও একক দলের নয়, তা গোটা দেশের গর্ব। কর্নেল সোফিয়া কুরেশির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এই দেশ ধর্মনিরপেক্ষ, সবাই মিলে লড়ছি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী বিভাজনের বার্তা দিচ্ছেন।”
বাংলার ভোটের এখনও এক বছর বাকি। কিন্তু মোদী বনাম মমতার এই ‘সিঁদুর যুদ্ধ’ বাংলায় ভোট যুদ্ধের আগাম বার্তা দিয়ে দিল। প্রশ্ন উঠছে— এই সংঘর্ষ কি বাংলার রাজনৈতিক মানচিত্র বদলে দেবে?
📌 আপনার মতামত কী? সিঁদুর নিয়ে রাজনীতি কি গ্রহণযোগ্য? নিচে কমেন্ট করে জানান।