লোহরি উৎসব শীতকালীন সূর্যাস্তের দিন উদযাপনের জন্য এক বিশেষ উৎসব। লোহরির পরদিন থেকে দিনের আলো বাড়তে শুরু করে এবং এটি একটি আশা ও আনন্দের সকালের প্রতীক বলে মনে করা হয়। এটি একটি ফসল উৎসব যা প্রধানত শিখ সম্প্রদায় অত্যন্ত উৎসাহের সাথে উদযাপন করে। পাঞ্জাব এবং হরিয়ানার প্রধান উৎসব হলেও, এটি বর্তমানে সারা দেশে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
লোহরি উদযাপনের মূল উদ্দেশ্য
লোহরি উৎসব বিক্রমী ক্যালেন্ডারের সাথে সম্পর্কিত এবং এটি মাঘী সংগ্রান্তের সাথে মিল রেখে উদযাপিত হয়। শীতকালীন সূর্যাস্তের সমাপ্তি স্মরণ করতে এবং কৃষকদের নতুন অর্থনৈতিক বছরের সূচনা উদযাপন করতে লোহরি পালন করা হয়। এই দিনে কৃষি জমির নতুন ভাড়া চুক্তি শুরু হয় এবং ভাড়া আদায় করা হয়। এ কারণেই এটি কৃষকদের কাছে নতুন অর্থবছরের প্রতীক।
লোহরি উদযাপনের রীতি
লোহরি শুধুমাত্র পাঞ্জাব এবং হরিয়ানার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এটি এখন হিন্দু সম্প্রদায় সহ অন্যান্য অঞ্চলেও জনপ্রিয়।
- সকালের রীতি: শিশুদের দল বাড়ি বাড়ি ঘুরে লোকগান গায় এবং এর বিনিময়ে মিষ্টি, গুড়, গজক, তিল, চিনির ক্যান্ডি, চিনাবাদাম এবং পপকর্ন পায়। শিশুদের খালি হাতে ফিরিয়ে দেওয়া অশুভ বলে মনে করা হয়।
- লোহরির সন্ধ্যা: রাতে সবাই মিলে একত্রে আগুন জ্বালায় এবং শিশুদের সংগৃহীত খাবার সেই আগুনে উৎসর্গ করে। সঙ্গীত ও নাচের মাধ্যমে সবাই রাত উপভোগ করে।
- ঐতিহ্যবাহী ভোজন: রাতের খাবারে সরষে শাক, মক্কাই রুটি এবং ক্ষীর পরিবেশন করা হয়।
- ঘুড়ি উড়ানো: পাঞ্জাবের কিছু অঞ্চলে এই দিনে ঘুড়ি ওড়ানো একটি জনপ্রিয় কার্যক্রম।
লোহরি গানের গুরুত্ব
লোহরি গানের মধ্য দিয়ে উৎসবের আনন্দ এবং উত্তেজনা প্রকাশ পায়। ঐতিহ্যবাহী এই গানগুলো ফসলের ভালো ফলন এবং প্রাচুর্যের জন্য ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানাতে গাওয়া হয়। দুল্লা ভাট্টি নামক এক কিংবদন্তিকে শ্রদ্ধা জানিয়ে লোহরি গানের রচনা হয়েছে। এই গানের মাধ্যমে তার বীরত্ব ও দাতব্য কর্মকাণ্ডকে স্মরণ করা হয়।
দুল্লা ভাট্টি: পাঞ্জাবের রবিনহুড
দুল্লা ভাট্টি ছিলেন মুঘল সম্রাট আকবরের সময়কার এক বীর যোদ্ধা। তিনি ধনীদের কাছ থেকে সম্পদ ছিনিয়ে গরিবদের সাহায্য করতেন এবং পাঞ্জাবি মেয়েদের দাস হিসেবে বিক্রি হওয়া থেকে রক্ষা করতেন। বিশেষ করে সুন্দরী এবং মুনদ্রী নামক দুই মেয়েকে রক্ষা করার জন্য তিনি বিখ্যাত। লোহরি গানগুলোতে দুল্লা ভাট্টির বীরত্বের কাহিনী তুলে ধরা হয়।
ভারতের অন্যান্য অংশে লোহরি
অন্ধ্রপ্রদেশে মকর সংক্রান্তির আগের দিনটি ভোগি নামে পরিচিত। এদিন পুরনো এবং অপ্রয়োজনীয় জিনিস ফেলে দেওয়া হয় এবং নতুন কিছু গ্রহণ করা হয়। ভোরে কাঠ এবং পুরনো আসবাবপত্র দিয়ে আগুন জ্বালানো হয়। এটি আত্মার শুদ্ধিকরণ এবং নতুন সূচনা প্রতীকী করে।
লোহরি উৎসব শীতের শেষ এবং নতুন সূর্যের আলোকে স্বাগত জানানোর এক সুন্দর উদযাপন। এটি ঐতিহ্য, সংস্কৃতি এবং সম্প্রীতির একটি জীবন্ত উদাহরণ।