কলকাতা, ১৬ জুন: রবিবার গভীর রাতে কলকাতার অন্যতম প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী খিদিরপুর বাজারে ঘটে গেল এক বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ড। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের দাবি অনুযায়ী, এই দুর্ঘটনায় অন্তত ১৩০০-রও বেশি দোকান পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। ভোর পর্যন্ত আগুনের লেলিহান শিখা এবং কালো ধোঁয়ায় ছেয়ে যায় গোটা এলাকা।
দমকলের ২০টি ইঞ্জিন আগুন নেভাতে রাতভর প্রাণপণ চেষ্টা চালালেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বেশ বেগ পেতে হয়। সোমবার সকালেও বাজারের মধ্যে একাধিক ‘পকেট ফায়ার’ দেখা যায়, যা এই আগুনের তীব্রতা আরও পরিষ্কার করে দেয়।
দমকল ও পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ
ঘটনাস্থল থেকে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ—দমকল বিলম্বে এসেছে এবং পর্যাপ্ত জল না থাকায় আগুন ছড়িয়ে পড়ে পুরো বাজার জুড়ে। এক ব্যবসায়ীর কথায়, “আগুন লাগার এক ঘণ্টারও বেশি সময় পর দমকল এসেছে। ততক্ষণে দোকানগুলো শেষ।”
অন্য এক দোকানদার বলেন, “ওয়াটগঞ্জ থানার পুলিশেরও কোনও সাড়া পাইনি। তারা ঘটনাস্থলে থাকলেও কার্যত নিষ্ক্রিয় ছিল।”
ষড়যন্ত্রের গন্ধ?
এই আগুন নিছক দুর্ঘটনা নয়, এমন আশঙ্কাও করছেন অনেকে। স্থানীয় এক ব্যবসায়ী বলেন, “এটা ইচ্ছাকৃত হতে পারে। আগুন যাতে নিয়ন্ত্রণে না আসে, সেই চেষ্টাও হয়তো হয়েছে।”
দমকলের অব্যবস্থা এবং পুলিশের অসহযোগিতা এই ষড়যন্ত্রতত্ত্বকে আরও জোরালো করেছে। ব্যবসায়ীদের দাবি, আগুন লাগার প্রকৃত কারণ এবং দায়ীদের চিহ্নিত করে দ্রুত কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা
এই অগ্নিকাণ্ডে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা। তেলের গুদাম, কাপড়ের দোকান, প্লাস্টিক ও ইলেকট্রনিকসের দোকানসহ বহু প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণ ছাই হয়ে গেছে। দোকানের ছাউনিগুলো বেঁকে গিয়েছে, মেঝে জুড়ে ছড়িয়ে আছে পোড়া মালপত্রের ধ্বংসাবশেষ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, দোকানগুলিতে একাধিক দাহ্য পদার্থ মজুত থাকার ফলেই আগুন এত দ্রুত ছড়ায়।
প্রশাসনের কাছে প্রশ্ন
এই ঘটনার পর সাধারণ মানুষের মধ্যে তৈরি হয়েছে প্রবল ক্ষোভ। প্রশ্ন উঠছে—দমকল ও পুলিশের ভূমিকা কেন এত দুর্বল? আগুন নেভানোর প্রস্তুতি কেন ছিল না?
রাজ্য প্রশাসনের কাছে এখন দুটি বড় দায়িত্ব—এক, এই অগ্নিকাণ্ডের পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করে ষড়যন্ত্রের সত্যতা যাচাই করা। দুই, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের দ্রুত আর্থিক পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা।