ভারতের বিবিধ সংস্কৃতির মধ্যে এখনও অনেক প্রাচীন প্রথা টিকে রয়েছে, যা সাধারণ মানুষের চোখ এড়িয়ে যায়। তেমনই এক প্রথা আবারও উঠে এল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে— ‘দ্রৌপদী প্রথা’, বা পলিয়ান্দ্রি বিয়ে, যেখানে একজন মহিলা একাধিক ভাইয়ের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।
সম্প্রতি হিমাচল প্রদেশের সিরমৌর জেলার শিল্লাই গ্রামের এক বিয়ের ঘটনা ভাইরাল হয়েছে, যেখানে হট্টি সম্প্রদায়ের নিয়ম মেনে এক মহিলা বিয়ে করলেন দুই ভাইকে। কুনহাট গ্রামের সুনীতা চৌহান বিয়ে করলেন প্রদীপ নেগি ও কপিল নেগির সঙ্গে। তিন দিন ধরে চলা ঐতিহ্যবাহী বিয়েতে ছিল প্রচুর অতিথি, ট্রান্স-গিরি অঞ্চলের খাবার আর পাহাড়ি গান-নাচে মেতে ওঠা আনন্দঘন পরিবেশ।
‘দ্রৌপদী প্রথা’ কী?
এই প্রথার নাম এসেছে মহাভারতের দ্রৌপদীর প্রসঙ্গ থেকে, যিনি পাঁচ পাণ্ডবের স্ত্রী ছিলেন। হিমাচলের হট্টি সম্প্রদায়ের মতে, এই প্রথার মূল উদ্দেশ্য জমিজমার বিভাজন রোধ, বিধবাপনার হাত থেকে রক্ষা এবং পারিবারিক ঐক্য বজায় রাখা। বিশেষ করে যেসব অঞ্চলে জমির পরিমাণ কম, সেখানে এই রীতি সমাজে স্থিতিশীলতা এনেছে বলেই অনেকের বিশ্বাস।
কেন রাজি হলেন সুনীতা?
সুনীতা স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, তাঁকে কোনও চাপ দেওয়া হয়নি। তিনি ছোটবেলা থেকেই দ্রৌপদী প্রথার বিষয়ে জানতেন এবং সব রীতি মেনেই নিজে থেকে বিয়েতে সম্মতি দিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘আমি জানতাম কাদের সঙ্গে আমার বিয়ে হচ্ছে, আর আমি জানি, আমাদের মধ্যে পারস্পরিক বিশ্বাস থাকলে এই সম্পর্ক সার্থক হবে।’’
আইনি স্বীকৃতি ও সামাজিক বাস্তবতা
এই ধরনের বিবাহ হিমাচল হাইকোর্টের অধীনে ‘জোড়িদার আইন’-এ স্বীকৃত। এছাড়া সম্প্রতি হট্টি সম্প্রদায়কে শিডিউলড ট্রাইবের মর্যাদা দেওয়ায় সমাজে এই প্রথার বৈধতা আরও মজবুত হয়েছে। তবে কুন্দন সিং শাস্ত্রী, হট্টি সেন্ট্রাল কমিটির জেনারেল সেক্রেটারি জানাচ্ছেন, ‘‘এই প্রথা আজও সম্মানের সঙ্গে রক্ষিত হলেও ধীরে ধীরে এটি বিলুপ্তির পথে। শিক্ষার প্রসার, শহরমুখী কর্মসংস্থান এবং আধুনিক মানসিকতা এর অন্যতম কারণ।’’
সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিক্রিয়া
এই বিয়ের খবর ছড়িয়ে পড়তেই সোশ্যাল মিডিয়ায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কেউ এই প্রথাকে সম্মান জানিয়েছে প্রাচীন সংস্কৃতির অঙ্গ হিসেবে, কেউ আবার প্রশ্ন তুলেছে নারীর স্বাধীনতা, পছন্দ ও সমাজের আধুনিকতা নিয়ে।
ভারতের মতো দেশে বৈচিত্র্যই সম্প্রীতির মূল মন্ত্র। হিমাচলের হট্টি সম্প্রদায়ের দ্রৌপদী প্রথা তা আরও একবার প্রমাণ করল। সময় বদলাচ্ছে, তবে কিছু ঐতিহ্য এখনও ইতিহাসের পাতায় নয়, বাস্তব জীবনে সম্মানের সঙ্গে বেঁচে রয়েছে।