দুর্গাপুজো ২০২৫ শুরু হতে বাকি !!

Days
Hours
Minutes
Seconds

আজ তাঁর প্রয়াণদিবস: গীতা দত্ত— সুরলোকে হারিয়ে যাওয়া এক বিস্ময় প্রতিভার নাম

আজ তাঁর প্রয়াণদিবস: গীতা দত্ত— সুরলোকে হারিয়ে যাওয়া এক বিস্ময় প্রতিভার নাম

“তুমি যে আমার, ওগো তুমি যে আমার” — এই গানটি শুধু বাংলা গানের ইতিহাসে নয়, ভারতীয় উপমহাদেশের সংগীত ঐতিহ্যে এক চিরন্তন রত্ন। আর যার কণ্ঠে এই সুর অমর হয়ে রইল, তিনি গীতা দত্ত। আজ তাঁর প্রয়াণের ৫৩ বছর পূর্ণ হল। ১৯৭২ সালের এই দিনেই তিনি চিরবিদায় নেন। কিন্তু রেখে যান এমন এক সুরলোক, যেখানে আজও ঘুরে বেড়ান সঙ্গীতপ্রেমীদের হৃদয়ে।

🎙️ এক বিরল প্রতিভার নাম— গীতা দত্ত

অধুনা বাংলাদেশের ফরিদপুরে জন্ম নেওয়া এই শ্যামবর্ণা বাঙালি কন্যা মাত্র ১৫ বছর বয়সেই বলিউডে প্লেব্যাক শুরু করেন। তাঁর অপূর্ব গায়কী, কন্ঠের আবেগ, এবং গলার বৈচিত্র্য তাঁকে অচিরেই সেরা করে তোলে। এমনকি লতা মঙ্গেশকরের আগেই প্লেব্যাক কুইনের মুকুট উঠেছিল তাঁর মাথায়। গুরু দত্তের সঙ্গে প্রেম ও পরবর্তীতে বিয়ে— যেন তাঁর জীবনের এক রোমাঞ্চকর অধ্যায়, তবে সে সঙ্গে জুটেছিল যন্ত্রণাও।

🎬 হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের নির্ভরতা, উত্তমকুমারের সংশয়

ছবির নাম ‘হারানো সুর’। সুচিত্রা সেনের লিপে হেমন্ত মুখোপাধ্যায় সিদ্ধান্ত নিলেন, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের বদলে গীতা দত্তই গাইবেন “তুমি যে আমার”।
বাকিরা সন্দিহান, উত্তমকুমার পর্যন্ত বলেছিলেন— “শুনেই দেখি, না হলে রবীন্দ্রসঙ্গীত দিয়ে দেব।”
কিন্তু হেমন্তবাবু বলেছিলেন, “এই গানটা গীতার মত করে আর কেউ গাইতে পারবে না।”
সত্যিই, গীতা দত্তের কণ্ঠে গানটি রীতিমতো ইতিহাস গড়ে।

💔 ভালোবাসা, জটিলতা, আর একলা যন্ত্রণার গল্প

গীতার জীবনে প্রাপ্তির যেমন ঘাটতি ছিল না, তেমনই ছিল আত্মত্যাগ, আবেগ ও অভিমান। গুরু দত্তের সঙ্গে সংসার করলেও, তাঁর কণ্ঠে যেন গাঁথা ছিল অপ্রকাশিত বেদনার সুর। গীতা দত্তের ওপর গুরু দত্তের পেশাগত সীমাবদ্ধতা আর মানসিক চাপ— তাঁকে ক্রমাগত দুর্বল করে দেয়।

শেষ জীবনে মদের প্রতি আসক্তি, স্বাস্থ্যের অবনতি, আর ‘সিরোসিস অফ লিভার’-এর নির্মম ছোবল— তাঁকে দিনে দিনে নিঃশেষ করে দেয়। শেষ সময়টা কেটেছে নল গোঁজা অবস্থায়, ব্যথায় কাতর হয়ে। মাত্র ৪২ বছর বয়সে তিনি আমাদের ছেড়ে চলে যান।

🎧 রেখে গেলেন এক স্বর্ণযুগ

“নিশিরাত বাঁকা চাঁদ আকাশে”, “কে ডাকে আমায়”, “ঝনক ঝনক কনক কাঁকন”, “এই সুন্দর স্বর্ণালী সন্ধ্যায়”, “তুমি বিনা এই ফাগুন”, “ওই সুর ভরা দূর নীলিমায়”, “কৃষ্ণচূড়া আগুন তুমি”— এমন অসংখ্য গান গীতা দত্তের কণ্ঠে এক যুগের সাক্ষী।

তাঁর গান আজও রিমেক হয়, ইউটিউবে ভাইরাল হয়, সিনেমার ব্যাকগ্রাউন্ডে বাজে— যেন সময়ের সীমা পেরিয়ে অনন্তকালের জন্য জায়গা করে নিয়েছে মানুষের হৃদয়ে।

গীতা দত্ত ছিলেন, আছেন, থাকবেন— তাঁর গানেই।
জীবন তাঁকে অনেক বঞ্চনা দিয়েছে, কিন্তু সঙ্গীত দিয়েছে চিরজীবনের অমরত্ব।
আজ তাঁর প্রয়াণদিবসে তাঁকে শত সহস্র প্রণাম জানাই— 🙏

Facebook
Twitter
WhatsApp
Telegram
Email
Print
আরও পড়ুন
error: Content is protected !!