১৮ বছরেই বিশ্বচ্যাম্পিয়নের মুকুট মাথায় তুলেছেন ভারতের দাবা তারকা দোম্মারাজু গুকেশ। কিন্তু এই স্বর্ণোজ্জ্বল সাফল্যের পেছনে লুকিয়ে রয়েছে এক অদম্য লড়াইয়ের কাহিনি। বাবার পেশা ত্যাগ, মায়ের একার উপার্জন, বন্ধুদের আর্থিক সাহায্য, কঠিন পরিশ্রম—এই সমস্ত উপাদান মিলে গড়ে উঠেছে আজকের গুকেশ।
🔹 শৈশবেই শুরু দাবার প্রতি প্রেম
গুকেশ মাত্র ছয় বছর বয়সে দাবার প্রতি আকৃষ্ট হন। এক বছরের মধ্যেই অনূর্ধ্ব-৯ বিভাগে এশিয়ান স্কুল দাবা প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়ে সকলকে চমকে দেন। ছোট্ট ছেলেটির মধ্যে বিশাল প্রতিভার আভাস তখনই মিলেছিল।

🔹 বাবা ENT চিকিৎসক, মা মাইক্রোবায়োলজিস্ট
চেন্নাইয়ে জন্ম নেওয়া গুকেশের পরিবার অত্যন্ত শিক্ষিত হলেও শুরুটা সহজ ছিল না। তাঁর বাবা রজনীকান্ত একজন ENT চিকিৎসক ছিলেন, আর মা পদ্মাকুমারী একজন মাইক্রোবায়োলজিস্ট। কিন্তু ছেলের স্বপ্ন পূরণে বাবাকে ত্যাগ করতে হয় নিজের পেশা। গুকেশকে দেশ-বিদেশের টুর্নামেন্টে নিয়ে যাওয়ার জন্য চিকিৎসার পেশা ছেড়ে দেন রজনীকান্ত।
🔹 সংসার চালাতেন কেবল মা, বন্ধুরা করতেন সাহায্য
যখন গুকেশ ও তাঁর বাবা একের পর এক আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে অংশ নিচ্ছেন, তখন সংসারের হাল ধরেন একা মা পদ্মা। এমন সময়ও এসেছে যখন পরিবার চরম আর্থিক সংকটে পড়ে। সেই সময় গুকেশের বাবা-মায়ের বন্ধুরা এগিয়ে এসে সাহায্যের হাত বাড়ান।

🔹 মাত্র ১২ বছরেই গ্র্যান্ডমাস্টার
গুকেশ মাত্র ১২ বছর ৭ মাস ১৭ দিন বয়সে ভারতের কনিষ্ঠতম গ্র্যান্ডমাস্টার হন। বিশ্বে দ্বিতীয় কনিষ্ঠ গ্র্যান্ডমাস্টার ছিলেন তিনি, রাশিয়ার সের্গে কারজাকিনের পর।
🔹 বিশ্বনাথন আনন্দের ছায়ায় গড়ে ওঠা
ভারতের প্রথম গ্র্যান্ডমাস্টার বিশ্বনাথন আনন্দের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে দীক্ষা নেন গুকেশ। ২০২২ সালের দাবা অলিম্পিয়াডে একক বিভাগে সোনা জেতেন তিনি। ২০২৩ সালে ২৭৫০ রেটিং পয়েন্ট অতিক্রম করে আনন্দকেও ছাড়িয়ে যান।

🔹 ডিং লিরেনকে হারিয়ে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন
২০২৪ সালের ডিসেম্বরে চিনের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ডিং লিরেনকে হারিয়ে গুকেশ হন সর্বকনিষ্ঠ বিশ্বচ্যাম্পিয়ন। গ্যারি ক্যাসপারভের ২২ বছর বয়সে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার রেকর্ড ভেঙে দেন তিনি।

🔹 ম্যাগনাস কার্লসেনকেও হারান গুকেশ
২০২৫ সালে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন গুকেশ আরও এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। বিশ্বের এক নম্বর দাবাড়ু ম্যাগনাস কার্লসেনকে হারান তিনি। ম্যাচের পর রেগে কার্লসেন টেবিলে ঘুষিও মারেন! যদিও পরে তিনি ক্ষমাও চান গুকেশের কাছে।
🔹 ১১ কোটিরও বেশি পুরস্কার
বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপ জিতে গুকেশ অর্জন করেন প্রায় ১১.৪৫ কোটি টাকা। এর পাশাপাশি তামিলনাড়ু সরকার তাঁকে আরও ৫ কোটি টাকা দেয়। স্কুলের পক্ষ থেকেও উপহার হিসেবে একটি বিলাসবহুল গাড়ি উপহার পান।

🌟 একটি পরিবার, এক স্বপ্ন, এক ইতিহাস
গুকেশ আজ শুধু একজন দাবাড়ু নন, তিনি লাখো তরুণের অনুপ্রেরণা। তাঁর সাফল্য প্রমাণ করে, সঠিক দিশা ও পারিবারিক সমর্থনে যে কোনও স্বপ্নই বাস্তব হয়ে উঠতে পারে। গুকেশের মতো প্রতিভাদের পাশে দাঁড়ানো দরকার দেশের তরফ থেকেও, কারণ তারা শুধু নিজেকে নয়, ভারতকেও বিশ্বের দরবারে তুলে ধরছে।