বিষ্ণুপুর:
শাড়ির আঁচলে ইতিহাস, ঐতিহ্য আর সংস্কৃতির গল্প বলে আসছে বালুচরি শাড়ি। একসময় যেখানে রামায়ণ-মহাভারতের কাহিনি আঁকা থাকত বালুচরির বুননে, আজ সেখানে ফিরছে প্রকৃতির ছোঁয়া। ফুল-পাতা, লতা-গুল্ম, পশু-পাখির নকশা আবারও জায়গা করে নিচ্ছে বালুচরির আঁচলে।
কেন এই পরিবর্তন?
জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত বালুচরি শিল্পী চন্দন দে জানালেন—
“দীর্ঘদিন ধরে ধর্মীয় কাহিনি নির্ভর শাড়ি বুনেছি। কিন্তু ক্রেতাদের কাছে তা একঘেয়ে হয়ে উঠছিল। উপরন্তু, অন্যান্য ধর্মের মহিলারা দেব-দেবীর ছবি দেওয়া শাড়ি পরতে চাইছিলেন না। তাই ফুল-পাতা ও প্রকৃতি-নির্ভর নকশার দিকেই ঝুঁকেছি।’’
এমন নকশার বালুচরির দাম গড়ে ১৩ হাজার টাকা।

কাহিনি-নির্ভর বালুচরির চ্যালেঞ্জ
বিষ্ণুপুরের বৈষ্ণবপাড়ার শিল্পী রাধেশ্যাম রজক জানালেন, “রাজা দুষ্মন্ত-শকুন্তলার ছবি দেওয়া বালুচরি বুনতে দু’জন শিল্পীর ১০ দিন লেগে যায়। মজুরি ১০ হাজার টাকা, কাঁচামাল ৫ হাজার—ফলে শাড়ির দাম দাঁড়ায় ২০ হাজার থেকে শুরু।”
অন্যদিকে শিল্পী গোবর্ধন পাল মনে করছেন, ভিনরাজ্যের বাজারে পৌরাণিক নকশা বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। অনেকে ধর্মীয় শ্রদ্ধার কারণে দেব-দেবীর ছবি আঁকা শাড়ি কিনতে চাইছেন না।
ক্রেতাদের প্রতিক্রিয়া
বিষ্ণুপুরের আয়েশা বিবি ও রুবিয়া বিবি বলেন, “আমরা পৌরাণিক কাহিনির ছবি দেওয়া বালুচরি ব্যবহার করি না। তবে ফুল-পাতার নকশার শাড়ি তৈরি হচ্ছে জেনে খুশি।”
তবে বিদেশে এখনও কাহিনি-নির্ভর বালুচরির চাহিদা রয়েছে। শিল্পী তপন পাল জানালেন, “বিদেশের বাঙালিরা পৌরাণিক কাহিনি আঁকা বালুচরি বেশি পছন্দ করেন। অনলাইনে সেই শাড়িরই বরাত এসেছে।”
সরকারি উদ্যোগ
বিষ্ণুপুর মহকুমা শাসক প্রসেনজিৎ ঘোষ জানান, বালুচরি শাড়ির নকশায় পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। বিষ্ণুপুর কে জি কলেজের বালুচরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের উদ্যোগে পুজোর আগেই বাজারে আসছে এক লক্ষ টাকার করম পরব থিমের বালুচরি শাড়ি। ডিজিটাল প্রযুক্তিতে কম সময়ে শিল্পীদের জন্য নানা নকশা তৈরি সম্ভব হবে।
শেষকথা
পুজোর আগেই বিষ্ণুপুরের তাঁতশিল্পীদের এই নতুন উদ্যোগ বাজারে এনেছে সতেজ হাওয়া। প্রকৃতি-নির্ভর নকশা যেমন ধর্মীয় সমন্বয়ের বার্তা দিচ্ছে, তেমনই ক্রেতাদের মধ্যে জাগাচ্ছে নতুন আগ্রহ। পুজোয় তাই বালুচরির আঁচলে মিলবে ঐতিহ্যের সঙ্গে আধুনিকতার এক অনন্য সংমিশ্রণ।