Tiyasa Karmakar, TIC
অক্ষয় তৃতীয়া ভারতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উৎসবগুলির একটি। ২০২৫ সালে এটি ২৯শে এপ্রিল এবং ৩০শে এপ্রিল পালিত হবে।
অক্ষয় তৃতীয়া উদযাপন: হিন্দু সংস্কৃতিতে সমৃদ্ধি ও সৌভাগ্যের প্রতীক
অক্ষয় তৃতীয়া, যাকে আখা তৃতীয়া নামেও ডাকা হয়, হিন্দু বর্ষপঞ্জির অন্যতম শুভ দিন হিসেবে গণ্য করা হয়। এই গুরুত্বপূর্ণ উৎসবটি ধন, সমৃদ্ধি ও সৌভাগ্যের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। ঐতিহ্যগতভাবে, এই দিনে ভক্তরা সোনা, রূপা এবং অন্যান্য মূল্যবান বস্তু কেনেন, যা বিশ্বাস করা হয় যে বছরের বাকি সময়ে অবিচ্ছিন্ন কল্যাণ ও উন্নতি বয়ে আনে।
এই দিনটিকে উদযাপন করার জন্য বিভিন্ন সম্প্রদায় প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং অনেকেই এই দিনে মূল্যবান ধাতুতে বিনিয়োগ করে দিনের ঐশ্বর্যপূর্ণ ভাবধারাকে সম্মান জানান।

“অক্ষয়” শব্দের অর্থ “চিরস্থায়ী” এবং “তৃতীয়া” মানে “তৃতীয়”। সেই অনুযায়ী, এই দিনটি নতুন কিছু শুরু করার জন্য অত্যন্ত শুভ সময় হিসেবে বিবেচিত হয়, কারণ এই দিনে করা যে কোনো শুভ কাজ বা বিনিয়োগ জীবনে স্থায়ী সমৃদ্ধি ও সৌভাগ্য বয়ে আনে—এমনটাই বিশ্বাস।
সোনা কেনার ঐতিহ্য: অক্ষয় তৃতীয়ার প্রিয় প্রথা
অক্ষয় তৃতীয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও জনপ্রিয় রীতিগুলোর মধ্যে একটি হলো সোনা কেনা। বহু মানুষ বিশ্বাস করেন, এই শুভ দিনে সোনা কেনা ভবিষ্যতের ধন-সম্পদ এবং ঐশ্বর্যের সম্ভাবনা অনেক গুণ বাড়িয়ে দেয়।
২০২৫ সালের অক্ষয় তৃতীয়ার তারিখ ও পূজার সময়সূচি
২০২৫ সালে অক্ষয় তৃতীয়া পালিত হবে ৩০শে এপ্রিল। পূজার শুভ সময় শুরু হবে সকাল ৫:৪১ মিনিটে এবং চলবে দুপুর ১২:১৮ মিনিট পর্যন্ত।
তবে “তৃতীয়া তিথি”—যা এই উৎসবের মূল অংশ—২৯শে এপ্রিল সন্ধ্যা ৫:৩১ মিনিটে শুরু হয়ে ৩০শে এপ্রিল দুপুর ২:১২ মিনিটে শেষ হবে।
কেন অক্ষয় তৃতীয়ায় সোনা কেনা হয়?
এই দিনটি বিভিন্ন পৌরাণিক ও ধর্মীয় ঐতিহ্যে বিশেষ স্থান অধিকার করে আছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বিস্তৃত এবং পরিচিত রীতিগুলোর একটি হলো সোনা কেনা।

সারা দেশ জুড়ে মানুষ সোনার গয়না ও মুদ্রা কিনতে গহনার দোকানে ভিড় করেন এবং অনেকে এটিকে একটি লাভজনক ও শুভ বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচনা করেন।
এই প্রথার পেছনের কারণসমূহ ঐতিহ্য ও অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে সমানভাবে সমৃদ্ধ:
সোনা শুধুমাত্র একটি মূল্যবান ধাতু নয়; এটি বহু প্রাচীনকাল থেকে ধন, সমৃদ্ধি ও সৌভাগ্যের শক্তিশালী প্রতীক হিসেবে পরিচিত। যারা অক্ষয় তৃতীয়া পালন করেন, তারা বিশ্বাস করেন—এই দিনে সোনা কেনা জীবনে সচ্ছলতা, সৌভাগ্য ও ধনের প্রবাহ অব্যাহত রাখে।
অক্ষয় তৃতীয়ার তাৎপর্য কেবলমাত্র সাংস্কৃতিক নয়, এটি হিন্দু বর্ষপঞ্জির অন্যতম শুভ দিন হিসেবেও বিবেচিত। এই দিনে করা যেকোনো বিনিয়োগকে ফলপ্রসূ মনে করা হয়, তাই সোনা কেনার জন্য এটি একটি আদর্শ দিন।
এই সোনা কেনার প্রথা প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ধরে চলে আসছে, যা ভারতীয় সমাজের একটি গভীর সাংস্কৃতিক রীতিকে প্রতিফলিত করে। মানুষ এই দিনটিকে উদযাপন করেন সোনা কেনার মাধ্যমে, যাতে দিনটির শুভতা ও ঐতিহ্য রক্ষা পায়।
আধুনিক প্রেক্ষাপটে সোনা কেনার অর্থ
যদিও এই প্রথাটি ঐতিহ্যবাহী ও ধর্মীয় গুরুত্ব বহন করে, তবুও আজকের দিনে এর তাৎপর্য কিছুটা রূপান্তরিত হয়েছে। অনেকেই এখন এই রীতিকে শুধুমাত্র শুভ সূচনার প্রতীক হিসেবে না দেখে, বরং এটিকে আর্থিক নিরাপত্তা অর্জনের একটি কৌশলগত বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচনা করেন, যা মুদ্রাস্ফীতির প্রভাব হ্রাস করতেও সহায়ক।