১২ জুনের ভয়াবহ এয়ার ইন্ডিয়া ড্রিমলাইনার দুর্ঘটনার পর তোলপাড় সারা দেশ। সেই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই বিমানবন্দরের চারপাশের নির্মাণ নিয়ে বড় সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে কেন্দ্রীয় সরকার। এবার নির্মাণে লাগাম টানতে ‘এয়ারক্র্যাফ্ট ডেমোলিশন অ্যান্ড অবস্ট্রাকশন রুল ২০২৫’-এর খসড়া প্রকাশ করল বিমান মন্ত্রক।

নতুন নিয়মে কী থাকছে?
এই খসড়া রুল অনুযায়ী, বিমানবন্দরের ৫৬ কিমি ব্যাসার্ধ এলাকায় যেকোনও বহুতল নির্মাণ, গাছ, টাওয়ার, কিংবা বাধা সরানোর ক্ষেত্রে আগাম অনুমতি নিতে হবে। এর আগে যেভাবে শুধুমাত্র ডিজিসিএ বা পুরসভার মাধ্যমে নোটিস পাঠানো যেত, এবার থেকে সরাসরি বিমানবন্দরের অধিকর্তা নোটিস দিতে পারবেন বেআইনি নির্মাণ বা গাছ কাটার বিষয়ে।
নির্মাণ মালিককে সেই নোটিস পাওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে প্রয়োজনীয় নথি জমা দিতে হবে। সেখানে থাকতে হবে নির্মাণের উচ্চতা, অবস্থান, ডিজাইন প্ল্যান ইত্যাদি। প্রয়োজন হলে আরও ৬০ দিনের সময় মিলবে, তবে সময়মতো ব্যবস্থা না নিলে সংশ্লিষ্ট নির্মাণ ভেঙে ফেলার সুপারিশও করা হবে।
নির্মাণ ভাঙা, গাছ কাটা – এবার আরও কঠোর ডিজিসিএ
ডিজিসিএ যদি প্রমাণ করে যে কোনও গাছ বা নির্মাণ বিমান চলাচলে বাধা সৃষ্টি করছে, তবে এবার আর স্থানীয় প্রশাসনের উপর নির্ভর করতে হবে না। ডিজিসিএ সরাসরি মালিককে নোটিস দিয়ে তা সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিতে পারবে। নোটিসের ৬০ দিনের মধ্যে ব্যবস্থা নিতে হবে। না হলে, জেলা প্রশাসনকেও বিষয়টি কার্যকর করতে বলা হবে।
ইন্সপেকশনে বিমানবন্দরের আধিকারিকরাও
প্রয়োজনে নির্মাণ এলাকায় ঢুকে তদন্ত করতে পারবেন বিমানবন্দরের আধিকারিকরা। কোনও মালিক সহযোগিতা না করলে বিষয়টি ডিজিসিএ-র কাছে রিপোর্ট করতে হবে।
আইনি সহায়তা ও ক্ষতিপূরণও থাকছে
যদি কেউ নিয়ম মেনে নির্মাণ ভাঙে, তবে তিনি ২০২৪-এর ভারতীয় বায়ুযান আইনের ২২ নম্বর ধারা অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ পেতে পারেন। কিন্তু নিয়ম না মানলে ক্ষতিপূরণের কোনও সুযোগ থাকবে না।
মানুষের প্রতিক্রিয়া: দেরিতে হলেও পদক্ষেপ
এই খসড়া প্রকাশ হতেই সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রশ্নের ঝড় – “এতদিন কি ঘুমিয়ে ছিলেন?”, “২৪১ জন মরার পরে টনক নড়ল?” আবার কেউ বলছেন, “দুর্ঘটনার পরে হলেও পদক্ষেপ প্রশংসনীয়।”
রাজ্যও উদ্যোগী, কলকাতা বিমানবন্দরের নিয়ন্ত্রণে নতুন নির্দেশিকা
বুধবার বিধানসভায় রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষ জানিয়ে দেন, আগে ৪৫ মিটার পর্যন্ত উচ্চতার বাড়ি নির্মাণে অনুমতি থাকলেও, এবার সেই সীমা আরও কমানো হবে। কলকাতা বিমানবন্দর চত্বরেও একইভাবে কড়া নিয়ন্ত্রণ আসতে চলেছে।
বিমানযাত্রা যেন নিরাপদ হয়, সেই লক্ষ্যেই এই নতুন নিয়মাবলি। প্রাথমিকভাবে এটা কঠোর মনে হলেও, এর বাস্তব প্রভাব হবে আমাদের জীবনরক্ষায়। তাই সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ, সচেতনতা এবং মতামতই গঠন করবে ভবিষ্যতের আরও সুরক্ষিত আকাশপথ।