গণেশ কেন সিদ্ধিদাতা? পৌরাণিক কাহিনি ও জীবনের শিক্ষা

গণেশ কেন সিদ্ধিদাতা? পৌরাণিক কাহিনি ও জীবনের শিক্ষা

গণেশের বুদ্ধিমত্তা যেভাবে তাঁকে করল সিদ্ধিদাতা

হিন্দু ধর্মে গণেশকে বলা হয় ‘বিঘ্নহর্তা’ এবং ‘সিদ্ধিদাতা’। অর্থাৎ তিনি সব বাধা দূর করে সাফল্য প্রদানকারী দেবতা। কোনও শুভ কাজ শুরু করার আগে বা নতুন উদ্যোগে নামার আগে গণেশ পূজার প্রথা সেই কারণেই প্রচলিত। কিন্তু প্রশ্ন হল, কীভাবে গণেশ হলেন সিদ্ধিদাতা? এর পিছনে রয়েছে চমকপ্রদ পৌরাণিক কাহিনি।


শ্রেষ্ঠত্বের প্রতিযোগিতায় গণেশের প্রজ্ঞা

একবার দেবতাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্বের প্রতিযোগিতা হল। শর্ত ছিল—যিনি সবার আগে পৃথিবী প্রদক্ষিণ করে ফিরবেন, তিনিই শ্রেষ্ঠ হবেন। দেবতারা তাঁদের বাহনে চড়ে বেরিয়ে পড়লেন। এমনকি কার্তিকও ময়ূরের পিঠে সওয়ার হয়ে দ্রুত ছুটলেন।
কিন্তু গণেশ? তাঁর বাহন তো ক্ষুদ্র ইঁদুর। তাই তিনি শিব ও পার্বতীকে প্রদক্ষিণ করে বললেন,
“আমার কাছে আপনারাই পৃথিবীর সমান। তাই আপনাদের প্রদক্ষিণ করাই পৃথিবী প্রদক্ষিণ করার সমান।”
দেবতারা গণেশের এই প্রজ্ঞায় অভিভূত হয়ে তাঁকেই শ্রেষ্ঠত্ব দিলেন। তখন থেকেই গণেশ হলেন সিদ্ধিদাতা ও বিঘ্নহর্তা

গণেশ কেন সিদ্ধিদাতা? পৌরাণিক কাহিনি ও জীবনের শিক্ষা

সরস্বতীর মতে গণেশ জ্ঞানের উৎস

অন্য একটি কাহিনি অনুসারে, দেবীরা একবার সরস্বতীকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন তাঁর জ্ঞানের উৎস কী? সরস্বতী বলেছিলেন, তাঁর জ্ঞান আসে গণেশের আশীর্বাদ থেকে। গণেশ ছাড়া জ্ঞান বা কাজ কোনওটাই সম্পূর্ণ হয় না। এই ঘটনার পর থেকেই গণেশকে সিদ্ধিদাতা হিসেবে পূজা করা হয়।

গণেশ কেন সিদ্ধিদাতা? পৌরাণিক কাহিনি ও জীবনের শিক্ষা

কেন গণেশ পূজা জীবনে গুরুত্বপূর্ণ?

গণেশকে সিদ্ধিদাতা হিসেবে পূজা করার পিছনে শুধু পৌরাণিক তাৎপর্য নয়, রয়েছে মানসিক ও সামাজিক প্রভাবও—

১. আত্মবিশ্বাস ও ইতিবাচক মানসিকতা: নতুন উদ্যোগ শুরুর আগে গণেশ পূজা করলে ভরসা বাড়ে।
২. বাধা দূরীকরণ: ভক্তরা বিশ্বাস করেন, গণেশ স্মরণ করলে জীবনের প্রতিবন্ধকতা কমে।
৩. সাফল্যের প্রতীক: কঠোর পরিশ্রমের পাশাপাশি প্রজ্ঞার গুরুত্ব মনে করিয়ে দেন গণেশ।
৪. সামাজিক বন্ধন: গণেশ চতুর্থী বা শুভ মুহূর্তে গণেশ পূজা ঐক্য ও সংস্কৃতির প্রতীক।

গণেশ কেন সিদ্ধিদাতা? পৌরাণিক কাহিনি ও জীবনের শিক্ষা

শেষকথা

গণেশ কেবল একটি দেবতার প্রতীক নন, তিনি হলেন আস্থা, বুদ্ধি ও সাফল্যের প্রতীক। তাঁর পূজা আমাদের শেখায়—জীবনে শুধু শক্তি বা গতি নয়, প্রজ্ঞা ও ধৈর্যও সমান গুরুত্বপূর্ণ। তাই তাঁকে সঠিক ভাবেই বলা হয় ‘সিদ্ধিদাতা’

Facebook
Twitter
WhatsApp
Telegram
Email
Print
আরও পড়ুন
error: Content is protected !!