২৪ জুলাই, রাত ৯টা ৩২ মিনিট। বাংলা সিনেমার ইতিহাসে যেন থেমে গেল এক সোনালি অধ্যায়ের স্পন্দন। প্রয়াত হলেন উত্তম কুমার—মহানায়ক। মেঘলা আকাশ, স্তব্ধ শহর, চোখ ভেজা লক্ষ অনুরাগীর। তবু তখনও বিশ্বাস করা কঠিন ছিল—সত্যিই কি শেষ হয়ে গেল এক স্বপ্নযাত্রা?
চলে গেছে ৪৬টি বছর। কিন্তু তাঁর মৃত্যু যেন এক রহস্যের চাদরে আজও মোড়া—যা ছড়িয়ে আছে তাঁর নিজেরই লেখা ডায়েরির পাতায়।
উত্তম কুমারের ঘনিষ্ঠজনেরা জানতেন, তিনি সবসময় সঙ্গে রাখতেন একটি ডায়েরি। সেখানে শুটিংয়ের সময়সূচি, ছবির নাম, মুক্তির দিন—সব কিছুই নিখুঁতভাবে লিখে রাখতেন। কিন্তু ১৯৮০ সালের ডায়েরির দিকে তাকালেই যেন গায়ে কাঁটা দেয়।
২৩ জুলাই পর্যন্ত লেখা রয়েছে সুপরিকল্পিতভাবে। কিন্তু ২৪ জুলাই—যে দিন তিনি প্রয়াত হন—সেই দিনের পাতাটি ফাঁকা! যেন কিছুই লেখার ছিল না… বা তিনি কিছু লেখেননি, জেনেও…
পরদিন ২৫ জুলাই-এর পাতায় লেখা ছিল “বাঞ্ছারামের বাগান”—একটি নাটকের নাম। কিন্তু সেটিও পরে তিনি নিজের হাতে কেটে দেন একটি দাগে। কেন?
আরও বিস্ময়কর তথ্য—২৬ জুলাই থেকে শুরু করে পরের কয়েকটি পাতায় তিনি আগেই লিখে রেখেছিলেন—
“বিশ্রাম”, “চিরবিশ্রাম”।
একটা আঁধার ছায়া কি ঘিরে ধরেছিল মহানায়কের মন?
তিনি কি বুঝতে পেরেছিলেন বিদায়ের ইঙ্গিত?
তাঁর শরীর কি আগেই জানিয়ে দিচ্ছিল কোনো অদৃশ্য বার্তা?
নাকি এটা ছিল এক আত্মিক সংলাপ—নিজের সঙ্গেই?
উত্তম কুমার কেবল এক নায়ক ছিলেন না—তিনি ছিলেন এক অনুভব, এক যুগের স্পন্দন।
আর তাঁর ডায়েরির শেষ পাতাগুলি যেন আজও বলে চলে এক অন্য গল্প—
নীরব, অথচ গভীর।
যেখানে লেখা নেই, তবু থেকে যায় বিস্ময়।
আর থেকে যায়—অনন্ত প্রশ্ন।