ওয়াশিংটন, ৪ জুলাই ২০২৫: আমেরিকার স্বাধীনতা দিবসেই দেশের রাজনীতিতে ঘটল বড় এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত। মার্কিন কংগ্রেসের উভয় কক্ষে ভোটাভুটির পর অবশেষে পাস হয়ে গেল ডোনাল্ড ট্রাম্পের বহু প্রতীক্ষিত ‘One Big Beautiful Bill’। আজ, শুক্রবার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজে এই বিলে স্বাক্ষর করে আইনে পরিণত করলেন।
কী রয়েছে এই ‘সুন্দর বিল’-এ?
এই বিলটি একটি মেগা লেজিসলেশন, যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে—
কর সংস্কার: মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মার্কিন নাগরিকদের জন্য বিশাল করছাড়। ২০১৭ সালের কর ছাড় স্থায়ী করা হয়েছে, কর্মচারীদের ওভারটাইম ও টিপসে কর মকুবের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ: অবৈধ অভিবাসীদের হটাতে ICE এবং বর্ডার সুরক্ষায় ১৭০ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ। সীমান্তে নজরদারি জোরদার করা হবে।
প্রতিরক্ষা বাজেট: প্রতিরক্ষা খাতে $১৫০ বিলিয়ন বরাদ্দ। প্রযুক্তি উন্নয়ন, অস্ত্রভাণ্ডার শক্তিশালীকরণ, ও সামরিক আধুনিকীকরণে জোর দেওয়া হয়েছে।
সামাজিক ব্যয় হ্রাস: Medicaid ও SNAP-এর মতো সামাজিক প্রকল্পে ব্যয় কমানো হয়েছে। এই কারণে কয়েক কোটি মানুষ স্বাস্থ্যসেবা ও খাদ্য সহায়তা হারাতে পারেন।
কত ভোটে পাস হলো বিলটি?
হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভসে বিলটি পাস হয় ২১৮-২১৪ ভোটে। মাত্র ৪ ভোটের ব্যবধানে জয়। ডেমোক্র্যাটদের প্রবল বিরোধিতা এবং রিপাবলিকান দলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব সত্ত্বেও ট্রাম্প প্রশাসনের রাজনৈতিক কৌশল এই বিল পাসে বড় ভূমিকা রাখে।
কংগ্রেসে বিগ বিউটিফুল বিল পাসের পর স্পিকার মাইক জনসন ও অন্যান্য রিপাবলিকান নেতা।
ট্রাম্পের প্রতিক্রিয়া
বিল পাস হওয়ার পর ট্রাম্প বলেন,
“এটি শুধু একটি বিল নয়, এটি আমেরিকার অর্থনীতির স্বাধীনতার ঘোষণা। এটা দেশের উন্নয়নকে রকেট গতিতে এগিয়ে নিয়ে যাবে।”
আইওয়ায় সমাবেশে বক্তব্য রাখছেন ট্রাম্প।
আন্তর্জাতিক প্রভাব
বিল পাস হওয়ার ঠিক আগেই ট্রাম্প প্রশাসন চিনের সঙ্গে একটি নতুন বাণিজ্য চুক্তিতে সম্মত হয়েছে। তবে চিনের সরকারি সংবাদমাধ্যমের মতে, “চুক্তিতে যেন দেশের স্বার্থ বিঘ্নিত না হয় তা নিশ্চিত করা হয়েছে।” আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞদের মতে, এই আইনের মাধ্যমে আমেরিকা চিনের ওপর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক চাপ আরও বাড়াতে চাইছে।
বিতর্ক ও সমালোচনা
ডেমোক্র্যাটদের অভিযোগ,
“এই বিল মধ্যবিত্তের নয়, ধনীদের স্বার্থরক্ষা করে। এর ফলে লক্ষ লক্ষ মানুষ স্বাস্থ্যসেবা ও সামাজিক সুরক্ষা হারাবে।”
বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, এর ফলে আমেরিকায় ধনী ও গরিবের বৈষম্য আরও বাড়বে।
‘One Big Beautiful Bill’ শুধুমাত্র একটি আইন নয়, ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে তাঁর রাজনৈতিক দর্শনের প্রকাশ। করছাড় এবং অভিবাসন নিয়ে এই পদক্ষেপ আমেরিকার অর্থনীতি ও সমাজে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলতে চলেছে। ৪ জুলাই স্বাধীনতা দিবসে এই আইন কার্যকর হওয়াটা নিঃসন্দেহে প্রতীকী এবং কৌশলগত দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ।
আগামী দিনে এই বিল কীভাবে আমেরিকার ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে, তা নিয়ে সারা বিশ্বের দৃষ্টি এখন ট্রাম্প প্রশাসনের দিকে।