সংবাদদাতা, রামপুরহাট: বাঙালির আধ্যাত্মিক মানচিত্রে এক বিশিষ্ট নাম তারাপীঠ। প্রতিবছরের মতো এ বছরও আয়োজিত হল দেবী তারার ঐতিহ্যবাহী রথযাত্রা। শুক্রবার বিকেলে রাজ রাজেশ্বরী বেশে মা তারা রথে চেপে বেরলে ভক্তদের মধ্যে উদ্দীপনার জোয়ার নামে।
রথযাত্রা উপলক্ষ্যে গোটা তারাপীঠজুড়ে বাজে শঙ্খধ্বনি, কাঁসরঘণ্টা আর “জয় তারা” ধ্বনি। বিকেল তিনটেয় মা-কে ভোগ নিবেদন করা হয় চিঁড়ে, পাঁচরকম মিষ্টি ও ফল দিয়ে। এরপর হয় বিশেষ পূজা। একান্তই এই রথযাত্রার বিশেষত্ব— মাকে বেনারসি শাড়ি পরানো হয়, গলায় থাকে অপরাজিতা, জবা, রজনীগন্ধা ফুলের বড় বড় মালা। এরপর গর্ভগৃহ থেকে সুসজ্জিত রথে আরোহন করেন দেবী।

তারা মা-ই এখানে জগন্নাথের প্রতিভূ। অন্যত্র জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার রথ হয়, আর এখানে হয় মা তারার। তিনি একইসঙ্গে কালী, আবার কৃষ্ণভাবাপন্নও। সোজা ও উল্টো রথ দুই পর্বেই মা রথে চড়েন।
রথ টানতে এসে ভক্তদের মধ্যে ছিল তুমুল উচ্ছ্বাস। ভক্তরা মনে করেন, রথের দড়িতে টান দিলে মনের মনস্কামনা পূর্ণ হয়। তাই ঝাড়খণ্ড, বিহার সহ বহু রাজ্য থেকে আগত ভক্তরা ভিড় করেন রথযাত্রায়।

তবে এবছর রথে পাণ্ডা ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের ভিড়ে কিছু ভক্ত রীতিমতো বিরক্ত হন। দর্শনার্থী রাজু দাস বলেন, “মায়ের দর্শন পেতে এসে এত ভিড়ে দাঁড়ানোও দায়। দড়িতে টান দেওয়ার সুযোগই পাইনি।”
মন্দির কমিটির সভাপতি তারাময় মুখোপাধ্যায় জানান, “রথযাত্রা শেষে মা-কে মন্দিরে ফিরিয়ে এনে সন্ধ্যা আরতি ও শীতল ভোগ নিবেদন করা হয়। রাতে মা-কে দেওয়া হয় লুচি, সুজি ও পাঁচরকম ভাজা।”
টিআরডিএ চেয়ারম্যান ও বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “প্রতিবছরই মায়ের রথের মাহাত্ম্য বাড়ছে। এবারও বিপুল ভক্তসমাগমে তা প্রমাণিত।”
তারাপীঠের এই রথযাত্রা শুধু এক ধর্মীয় আচার নয়, এক ভক্তির উৎসব— যেখানে মিলেমিশে যায় দেবী আর ভক্ত, আস্থা আর ঐতিহ্য।