পশ্চিম মেদিনীপুরের গনগনি পেয়েছে নতুন সম্মান। ভারত সরকারের খনি মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ Geological Survey of India (GSI) আনুষ্ঠানিকভাবে গনগনিকে ‘জিও হেরিটেজ সাইট’ হিসেবে ঘোষণা করেছে। ২১ জুন ২০২৫, গড়বেতা ১ ব্লকের প্রশাসনিক অনুমতি নিয়ে জিএসআইয়ের প্রতিনিধিরা এলাকায় বোর্ড বসান এবং গনগনির ভূ-বৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক গঠন সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন বাংলা, হিন্দি ও ইংরেজিতে।
🌄 কেন গনগনি বিশেষ?
জিএসআই গনগনিকে ‘বাংলার গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন’ বলেই পরিচয় করিয়েছে। বহু স্তরের ল্যাটেরাইট গঠনে তৈরি এই মধ্যম-স্তরের ভূ-আকৃতি অঞ্চল এক অনন্য প্রাকৃতিক বিস্ময়। লাল-ধূসর রঙের খাঁজ কাটা উপত্যকা বরাবর বিস্তৃত গনগনি অঞ্চল পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতায় বহু দিন ধরেই দর্শনার্থীদের কাছে আকর্ষণীয় ছিল। এখন সেই জায়গাটিই পেয়ে গেল সরকারি ‘Geo Heritage’ স্বীকৃতি।

🧭 গবেষণা ও পর্যটনের নতুন দিগন্ত
এই স্বীকৃতিতে গনগনিতে কোনও সরাসরি আর্থিক বরাদ্দ না হলেও, বিশেষজ্ঞদের মতে ভবিষ্যতে গবেষণা, শিক্ষাক্ষেত্র এবং ভূ-পর্যটনের কেন্দ্র হয়ে উঠতে চলেছে এই অঞ্চল।
ভূগোলের অধ্যাপক শুভেন্দু ঘোষ বলছেন,
“এই স্বীকৃতি শুধু গর্বের নয়, গবেষণার জন্যও এক সুবর্ণ সুযোগ। ভূতত্ত্বের দৃষ্টিকোণ থেকে গনগনির গভীর পর্যবেক্ষণ করলে বাংলার মাটির গঠন সম্পর্কে বহু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে আসবে।”
🏞️ পর্যটনের জন্য সম্ভাবনা ও পরিকল্পনা
রাজ্যের পর্যটন দফতরও গনগনির এই স্বীকৃতিতে সন্তোষ প্রকাশ করেছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের পর্যটন আধিকারিক মৃদুল শ্রীমানি জানিয়েছেন,
“আমরা আশা করি বাংলার মানুষ আরও বেশি করে গনগনিতে আসবেন। পরিবেশ ও ভূ-প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য রক্ষা করেই এটি পর্যটকদের জন্য আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে চাই।”
🎥 তথ্যচিত্র এবং প্রচার
গনগনির গঠন ও গুরুত্ব বোঝাতে জিএসআই একটি তথ্যচিত্রও তৈরি করেছে, যা জাতীয় স্তরে সম্প্রচারের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে পাঠানো হয়েছে। জিএসআইয়ের উপ-মহানির্দেশক শান্তনু ভট্টাচার্য জানিয়েছেন,
“এই ভিডিওটি ছাত্র, পর্যটক এবং গবেষকদের কাছে গনগনির গুরুত্ব আরও স্পষ্ট করবে।”
📌 পশ্চিমবঙ্গে আরও দুই জিও-হেরিটেজ
গনগনি ছাড়াও আরও দুটি স্থানে জিও-হেরিটেজ স্বীকৃতি দিয়েছে জিএসআই— সুন্দরবন এবং বোলপুরের আমখই (যেখানে একটি জীবাশ্ম পার্ক রয়েছে)। এই স্থানগুলিতেও বোর্ড বসানো হবে বলে জানিয়েছে জিএসআই।
গনগনির এই ‘জিও হেরিটেজ’ স্বীকৃতি শুধুই একটি শিলাফলক নয়, এটি বাংলার প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে তুলে ধরার এক দিশা। যদি ঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ ও পর্যটন উন্নয়ন হয়, তবে গনগনি বাংলার গর্ব হিসেবে মাথা তুলে দাঁড়াবে ‘গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন’-এর মতোই।