১৬ই জুন, ১৯৫০ – এক সাধারণ জন্ম, অসাধারণ যাত্রার সূচনা
পশ্চিমবঙ্গের এক সাধারণ পরিবারে জন্ম নেওয়া গৌরাঙ্গ চক্রবর্তী একদিন হয়ে উঠবেন ভারতীয় সিনেমার মেগাস্টার—তা কেউ ভাবেননি। সেই দিনে কোনও উৎসবের হইচই ছিল না, কিন্তু ইতিহাসে জন্ম নিল এক অনন্য অধ্যায়। জীবন শুরু হল আর্থিক অনটন, সামাজিক অবজ্ঞা, এবং বাস্তবের নির্মম পরিহাসের মধ্যে দিয়ে।

বেঁচে থাকার লড়াই থেকেই অভিনেতা হয়ে ওঠা
ছোটবেলায় ছিলেন পাড়ার সাধারণ ছেলে—খেলাধুলা, ছাত্র রাজনীতি, জীবন নিয়ে দোলাচল। কিন্তু জীবনের মোড় ঘুরল যখন ঘর ছেড়ে মুম্বাই পাড়ি দিলেন। ঘুমাতেন প্ল্যাটফর্মে, কখনো না খেয়ে থাকতেন দিনের পর দিন। তিনি নিজেই বলেছিলেন, “হিরো হবার স্বপ্ন ছিল না, কেবল বাঁচার চেষ্টা ছিল।”

এই সংগ্রামী মনোভাবই তাঁকে পৌঁছে দেয় কিংবদন্তি পরিচালক মৃণাল সেনের কাছে। ‘মৃগয়া’ ছবিতে দুর্দান্ত অভিনয় করে জাতীয় পুরস্কার জিতে নেন। শুরু হয় রূপালি যাত্রা।
‘ডিস্কো ডান্সার’-এর সঙ্গে ভারতীয় সিনেমায় নতুন যুগের সূচনা

৮০-র দশকে ‘ডিস্কো ডান্সার’ মুক্তি পাওয়ার পর সারা ভারত উত্তাল হয়ে ওঠে। মিঠুন হয়ে ওঠেন সেই সময়ের ইয়ুথ আইকন। সাধারণ চেহারার, খাঁটি বাংলার ছেলে হয়ে ওঠেন বলিউডের স্টাইলিশ সুপারস্টার। নাচ, মারপিট, অভিনয়—সবেতেই তিনি ছিলেন অব্যর্থ।
📌 মিঠুন চক্রবর্তী শুধু একজন অভিনেতা নন, তিনি হয়ে উঠেছিলেন আশাহত মানুষের আশার প্রতীক।
🎭 বহুমাত্রিক অভিনয় ও রাজনৈতিক অংশগ্রহণ
তিনি যেমন অ্যাকশন হিরো, তেমনই ছিলেন আবেগময় চরিত্রের জন্য বিখ্যাত। হাসির চরিত্রে যেমন সাবলীল, নেতিবাচক চরিত্রেও তেমনি সফল। বলাই যায়—তিনি এক চলন্ত অভিনয় স্কুল।
পরে রাজনৈতিক মঞ্চেও যোগ দেন, সাধারণ মানুষের প্রতিনিধি হিসেবে। বাস্তব জীবনে যেমন নির্ভরতার প্রতিমূর্তি, তেমনি পর্দার বাইরেও।
আজও অমলিন, অদ্বিতীয়

আজ মিঠুন চক্রবর্তী ৭৫ পেরিয়েও অভিনয়ে অটুট। ওটিটি প্ল্যাটফর্ম থেকে বড় পর্দা—সব জায়গাতেই তিনি ব্যস্ত, প্রাণবন্ত ও প্রাসঙ্গিক। তাঁর জীবনের আলো এখনও বহু মানুষকে পথ দেখায়।
🎬 মিঠুন চক্রবর্তীর বিখ্যাত সিনেমাসমূহ
চার দশকেরও বেশি সময় ধরে চলা অভিনয় জীবনে মিঠুন চক্রবর্তী উপহার দিয়েছেন শতাধিক জনপ্রিয় সিনেমা, যেগুলি শুধুমাত্র বক্স অফিস হিট নয়, দর্শকদের হৃদয়ে চিরস্থায়ী আসন করে নিয়েছে। নিচে তাঁর কিছু বিখ্যাত ও কালজয়ী সিনেমার নাম দেওয়া হল:
🟡 মৃগয়া (1976) – মৃণাল সেন পরিচালিত এই ছবির মাধ্যমেই অভিনয়ে তাঁর পথচলা শুরু। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জয় করেন।
🟡 ডিস্কো ডান্সার (1982) – ভারতীয় সিনেমায় মিউজিক্যাল ডিস্কো সংস্কৃতির সূচনা। আজও এই ছবির গান ও নাচ জনপ্রিয়।
🟡 ডান্স ডান্স (1987) – মিউজিক ও পারফরম্যান্সে ভরপুর এই ছবিও সুপারহিট হয়।
🟡 অগ্নিপথ (1990) – অমিতাভ বচ্চনের বিপরীতে একজন প্রভাবশালী চরিত্রে অভিনয় করে প্রশংসা পান।
🟡 পেয়ার ঝুকতা নেহি (1985) – প্রেম ও ট্র্যাজেডিতে মিঠুনের সংবেদনশীল অভিনয় নজর কাড়ে।
🟡 পাসার (1987) – বলিউডে মারপিট, ড্রামা ও আবেগের চমৎকার মিশ্রণ।
🟡 তাহাদের কথা (1992) – জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জয়ী সামাজিক ছবি, যেখানে তাঁর অভিনয় ছিল অত্যন্ত মানবিক।
🟡 ফুল অউর অংগার (1993) – অ্যাকশনধর্মী এই ছবিতেও মিঠুন ছিলেন দুর্দান্ত।
🟡 গুরু (2007) – অমিতাভ বচ্চন ও অভিষেক বচ্চনের সঙ্গে বড় পর্দায় ফিরে এসে অভিনয়ে নতুন মাত্রা যোগ করেন।
🟡 দ্য তাসকেন ফাইলস (2019) – এই রাজনৈতিক থ্রিলারে তাঁর চরিত্র ছিল জটিল ও চমৎকারভাবে উপস্থাপিত।
মিঠুন চক্রবর্তী জীবনের মূল শিক্ষা
🔹 স্বপ্ন দেখুন
🔹 নিজেকে বিশ্বাস করুন
🔹 কঠোর পরিশ্রম করে যান
🔹 কখনো হাল ছাড়বেন না
গৌরাঙ্গ চক্রবর্তী থেকে মিঠুন হয়ে ওঠার এই যাত্রা এক অনুপ্রেরণার কাহিনী, যা বাংলার গর্ব, ভারতের গর্ব।
আজ আপনার জন্মদিনে কোটি ভক্তের হৃদয় থেকে উঠে আসছে একটাই প্রার্থনা—
আপনি সুস্থ থাকুন, শক্তিতে ভরপুর থাকুন, আরও বহু বছর আমাদের অনুপ্রেরণা হয়ে থাকুন।