নিজস্ব প্রতিবেদন | নয়াদিল্লি | ১৪ জুন, ২০২৫:
এখনও উঠছে একটাই প্রশ্ন—গাফিলতি কোথায়? এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনার পর কেটে গিয়েছে ২৪ ঘণ্টা, কিন্তু গোটা বিশ্ব এখনও খুঁজছে উত্তর—এই দুর্ঘটনার নেপথ্যে কার ভুল? কীভাবে ঘটল এই বিপর্যয়?
এই ঘটনার তদন্তের মূল কেন্দ্রে উঠে এসেছে একটি সময়সীমা—শেষ ৫২ সেকেন্ড। কারণ, ঠিক এই সময়ের মধ্যেই ফ্লাইটটি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে ৬২৫ ফুট উচ্চতা থেকে ভেঙে পড়ে। আর এই সময়ের প্রতিটি সেকেন্ড এখন বন্দি ব্ল্যাক বক্সে—যা ইতিমধ্যেই উদ্ধার করা হয়েছে।

এই ব্ল্যাক বক্সের দু’টি অংশ—ডিজিটাল ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডার এবং ককপিট ভয়েস রেকর্ডার—এখন তদন্তের প্রধান অস্ত্র। ফ্লাইট রেডার অনুযায়ী, ‘মে ডে’ কলের ঠিক ৫২ সেকেন্ড পর দুর্ঘটনাটি ঘটে। এখন গোটা বিশ্ব জানার অপেক্ষায়—এই অন্তিম সময়ে কী বলেছিলেন ক্যাপ্টেন সুমিত সাভারওয়াল এবং ফার্স্ট অফিসার ক্লাইভ কুন্দে? তাঁদের শেষ কমান্ড, শেষ বাক্যগুলি কী ছিল?
ককপিট ভয়েস রেকর্ডার সেইসব কথোপকথন সংরক্ষণ করে, আর ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডার মনিটর করে প্রতিটি যান্ত্রিক পরিমাপ—ইঞ্জিনের গতি, হাইড্রলিক সিস্টেম, ফ্ল্যাপ সেটিং, ফুয়েল কন্টানিমেশনসহ সবকিছু।
আন্তর্জাতিক তদন্ত শুরু
ভারতে ইতিমধ্যেই এসে পৌঁছেছে আমেরিকার ন্যাশনাল ট্রান্সপোর্টেশন সেফটি বোর্ড (NTSB) ও ব্রিটেনের এভিয়েশন ইনভেস্টিগেশন বিশেষজ্ঞরা। ভারতীয় এয়ারক্র্যাফট অ্যাক্সিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো (AAIB)-এর সঙ্গে যৌথভাবে তদন্ত শুরু হয়েছে।
প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে উদ্বেগজনক প্রশ্ন—
- টেক-অফের পরও কেন ল্যান্ডিং গিয়ার ডাউন ছিল?
- কেনই বা উইংস ফ্ল্যাপ আপ ছিল না?
এই দুই প্রশ্ন নিয়েই বিস্ময় প্রকাশ করেছেন NTSB-এর প্রাক্তন চেয়ারম্যান রবার্ট সামওয়াল্ট।
ফ্লাইটের যাত্রা এবং বিপর্যয়
বিমানটি দুপুর ১টা ৩৯ মিনিটে রানওয়ে নম্বর ২৩ থেকে উড্ডয়ন করে। তখনই শুরু হয় প্রশ্নের পর প্রশ্ন—টেক অফের আগে যান্ত্রিক সব কিছু ঠিকঠাক ছিল? কোনও ত্রুটি ছিল কি?
ফ্লাইট রেডার বলছে, ৬২৫ ফুট উচ্চতায় থাকা অবস্থায় মিনিটে ৮৯৬ ফুটের ভার্টিকাল স্পিডে প্লেনটির নাক অস্বাভাবিকভাবে ঊর্ধ্বমুখী ছিল। ভিডিও বিশ্লেষণে সন্দেহ, শেষ মুহূর্তে পাইলট ও কপাইলট বুঝে গিয়েছিলেন, প্লেন ক্র্যাশ করতে চলেছে। তাঁরা তখন মরিয়া চেষ্টা করছিলেন শেষ মুহূর্তে উদ্ধার পাওয়ার।

কী আছে ব্ল্যাক বক্সে?
- ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডার ২৫ ঘণ্টার তথ্য ধরে রাখতে পারে
- ককপিট ভয়েস রেকর্ডার শেষ ২ ঘণ্টার কথা রেকর্ড করে
এবার তদন্তকারীদের দরকার মাত্র ৫২ সেকেন্ডের তথ্য! সেই সময়ের প্রতিটি শব্দ, প্রতিটি কমান্ড, প্রতিটি যান্ত্রিক প্রতিক্রিয়া বিশ্লেষণ করেই মিলতে পারে দুর্ঘটনার আসল কারণ।
কে করেছিল ফ্লাইট পরিদর্শন?
ফ্লাইটের Maintenance, Repair and Operations (MRO) টিমের সদস্যদেরও জেরা করা হবে। তাদের দেওয়া Pre-Flight Inspection Report-এ কি কোনও গাফিলতির চিহ্ন ছিল? তদন্তের পরত খুলতে খুলতে সামনে আসছে একের পর এক প্রশ্ন।
ব্ল্যাক বক্সই এবার এই ভয়াবহ দুর্ঘটনার একমাত্র সাক্ষী। তার ভিতরেই লুকিয়ে রয়েছে গাফিলতির আসল সূত্র। গোটা দেশ এবং বিশ্ব এখন অপেক্ষায়—এই অন্তিম ৫২ সেকেন্ডের ভিতরেই কি লুকিয়ে আছে ভয়ানক সত্য?