কাশ্মীর মানেই আজও অনেক বাঙালির কাছে রোমান্টিক ভ্রমণের গন্তব্য। কিন্তু এবার সেই পাহাড়ই হয়ে উঠল এক ভয়াবহ দুঃস্বপ্নের মঞ্চ। জঙ্গি হামলায় নিহত হলেন দুই বাঙালি – কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মী সমীর গুহ এবং আমেরিকা প্রবাসী বিতান অধিকারী। বুধবার সন্ধ্যায় তাঁদের কফিনবন্দি দেহ কলকাতা ফিরতেই নেমে এল শোকের ছায়া।
এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানে সন্ধ্যা ৭টা ২৯ মিনিটে দেহদুটি দিল্লি হয়ে এসে নামে কলকাতায়। পাঁচ নম্বর কার্গো গেট ঘিরে সকাল থেকেই তৈরি ছিল প্রশাসনিক ও নিরাপত্তার ব্যবস্থাপত্র। উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী, পুরপ্রতিনিধি, সংবাদমাধ্যম এবং অসংখ্য সাধারণ মানুষ।

সমীর গুহের স্ত্রী শর্বরী গুহ কফিনের সামনে দাঁড়িয়ে ভেঙে পড়েন কান্নায়। পাশে নির্বাক কন্যা শুভাঙ্গী। সদ্য দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষা দেওয়া এই কিশোরী যেন বুঝতেই পারছে না—পিতা আর ফিরবেন না। ক্লাবের পুজো মণ্ডপে রাখা হয় সমীরের দেহ, যেখানে বন্ধু-পরিজন আর সহকর্মীরা এসে জানায় শেষ শ্রদ্ধা।
অন্যদিকে, বিতান অধিকারীর নিথর দেহ পৌঁছয় তাঁর রূপকথা আবাসনের ফ্ল্যাটে। বয়স্ক মা-বাবা স্তব্ধ চোখে দেখেন তাঁদের ছেলের কফিন। বিতানের স্ত্রী শেষবারের মতো দরজা পর্যন্ত এসে ফিরে যান। খাঁচাবন্দি দুটি পাখির দিকে তাকিয়ে শুধু বলেন—“পাখি দুটো ছেলেকে কিনে দিতে বলেছিলে। পাখি দুটো রয়ে গেল, তুমি আর নেই।” এই সংলাপ যেন মুহূর্তে জমাট বাঁধিয়ে দেয় গোটা পরিবেশ।
সাড়ে তিন বছরের ছোট্ট হৃদানের অবুঝ প্রশ্নও ভিজিয়ে দেয় উপস্থিত সবাইকে—“বাবা কই? আমাদের তো নিয়ে যাওয়ার কথা বলেছিল!” তার সেই প্রশ্নের উত্তর আজ কারও কাছেই নেই।
রাত ৯টা ৪২ মিনিটে সমীরের, এবং আধঘণ্টা পর বিতানের দেহ পৌঁছয় কেওড়াতলা শ্মশানে। রাত সাড়ে ১১টার সময়ে সম্পন্ন হয় তাঁদের শেষকৃত্য। কিন্তু থেকে যায় না বলা শত শত কথা, অপূর্ণ গল্প, আর কিছু পাখি—যারা এখনো অপেক্ষায় প্রিয়জনের।