কলকাতা, ৩ মার্চ: গত বছরের ৯ অগস্ট, কলকাতার আরজি কর হাসপাতালে ঘটে এক মর্মান্তিক ঘটনা। হাসপাতালের চারতলার সেমিনার হল থেকে উদ্ধার হয় এক মহিলা চিকিৎসকের মৃতদেহ। সেদিনের পরে তদন্তে জানা যায়, ওই মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছিল। প্রথমে কলকাতা পুলিশ তদন্ত শুরু করলেও, বিভিন্ন সন্দেহ এবং চাপের কারণে হাইকোর্টের নির্দেশে এই মামলা এখন সিবিআই-এর হাতে।
সিবিআই, যাদের তদন্তকারীরা এখনও ওই নারীর মৃত্যুর রহস্য উন্মোচনে কাজ করছেন, সম্প্রতি এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে। গত ৯ অগস্ট, ঘটনার দিন রাতে আরজি কর হাসপাতালের পুলিশ আউট পোস্টে কর্তব্যরত কলকাতা পুলিশের ১১ জন পুলিশকর্মীকে তলব করেছে সিবিআই। সিজিও কমপ্লেক্সে এই পুলিশ কর্মীদের বয়ান রেকর্ড করা হবে এবং তাদের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করা হবে।
সিবিআই-এর তদন্তের নতুন দিক
জানা গেছে, সিবিআই কলকাতা পুলিশের কাছ থেকে ঘটনার সময়ের সমস্ত তথ্য সংগ্রহ করেছে, যার মধ্যে অন্যতম ছিল ওই রাতে আউট পোস্টে কর্মরত পুলিশ কর্মীদের নামের তালিকা। তদন্তকারীরা এই তালিকা দেখে এবং সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মীদের জিজ্ঞাসাবাদ করবে, যাতে ঘটনার রাতে তারা কোনও সন্দেহজনক কিছু লক্ষ্য করেছেন কিনা তা জানা যায়।
সিবিআই কর্মকর্তারা বিশেষভাবে জানতে চাইবেন, ঘটনার রাতে হাসপাতালের ভিতরে কোনো বহিরাগত ব্যক্তি প্রবেশ করেছিল কিনা। পুলিশ কর্মীদের কাছ থেকে প্রাপ্ত বয়ান ও তথ্য এই রহস্যময় খুনের ঘটনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে।
কলকাতা পুলিশ এবং সিভিক ভলেন্টিয়ারের গ্রেফতার
প্রথমে কলকাতা পুলিশ এই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছিল এবং তারা শিগগিরই গ্রেফতার করেছিল একটি সিভিক ভলেন্টিয়ারকে। তবে, চিকিৎসক সংগঠনের সদস্যরা এই সন্দেহ প্রকাশ করেন যে, এই ঘটনা আরেকটি বড় পরিকল্পনার অংশ হতে পারে। তার পরেই, হাইকোর্টের নির্দেশে মামলাটি সিবিআই-এর হাতে চলে যায়।
সিবিআই কীভাবে তদন্ত করবে?
সিবিআই এই মামলা দুটি ভাগে ভাগ করে তদন্ত করবে। প্রথমে, তারা হাসপাতালের অভ্যন্তরে ঘটনার সময় কোনো সন্দেহজনক বা অস্বাভাবিক কিছু ঘটেছিল কিনা তা জানার চেষ্টা করবে। দ্বিতীয়ত, পুলিশ কর্মীদের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে, যাতে ঘটনা সম্পর্কে সঠিক তথ্য পাওয়া যায়। এই তদন্তের ফলে, মামলার কোন দিক স্পষ্ট হতে পারে, তা সময় বলবে।
ভবিষ্যতের জন্য কী অপেক্ষা করছে?
এখন পর্যন্ত সিবিআই ঘটনার দিকে নজর রেখে তদন্ত করছে এবং পুলিশ কর্মীদের বয়ান রেকর্ড করছে। তবে, এর থেকে আগাম মন্তব্য করা সম্ভব নয়। তবে, তদন্তের পরিপ্রেক্ষিতে সিবিআই আরো সন্দেহভাজনদের ধরতে পারে বা এর গভীরে কোনো বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের সূচনা হতে পারে।
এই ঘটনাটি শুধুমাত্র কলকাতা নয়, সারা বাংলার মানুষের মনে গভীর দাগ কাটছে। মহিলাদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে এবং সঠিক বিচার পাওয়ার দাবি তোলা হচ্ছে। সিবিআই-এর এই নতুন পদক্ষেপ আশা জাগাচ্ছে, যাতে তদন্তে কোনো রকমের বিচ্যুতি না ঘটে এবং দোষীদের শাস্তি দেওয়া যায়।
আরও পরুন : আরজি কর মামলায় সঞ্জয় রায়ের যাবজ্জীবন শাস্তি