বিশ্ব এইডস দিবস ২০২৪ (১লা ডিসেম্বর): এইচআইভি এবং এইডসের মধ্যে পার্থক্য বোঝা এখনও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই দুইটি বিষয় নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং সঠিক চিকিৎসা নিশ্চিত করাই এই দিবস পালনের মূল উদ্দেশ্য।
এইচআইভি কী?
হিউম্যান ইমিউনোডেফিসিয়েন্সি ভাইরাস (এইচআইভি) একটি ভাইরাস যা শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা ধ্বংস করে, ফলে মানুষ বিভিন্ন রোগ এবং সংক্রমণের প্রতি সংবেদনশীল হয়ে পড়ে।
লক্ষণ:
এইচআইভি সংক্রমণের পর প্রথম ২-৪ সপ্তাহে শরীরে জ্বর, মাথাব্যথা, র্যাশ এবং গলা ব্যথার মতো লক্ষণ দেখা দিতে পারে। এই পর্যায়ে ভাইরাসটি দ্রুতগতি ছড়ায় এবং রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করতে শুরু করে। এটি সংক্রমণের সবচেয়ে সংক্রামক সময়।
এইচআইভি কীভাবে ছড়ায়:
এইচআইভি মূলত রক্ত, বুকের দুধ, বীর্য এবং যোনি নিঃসরণের মাধ্যমে একজন সংক্রমিত ব্যক্তির থেকে অন্যজনের মধ্যে ছড়ায়। এছাড়াও, গর্ভাবস্থায় বা প্রসবের সময় এটি মায়ের থেকে সন্তানের মধ্যে ছড়াতে পারে। তবে দৈনন্দিন মেলামেশার মাধ্যমে (যেমন: চুম্বন, আলিঙ্গন, হাত মেলানো, খাবার বা পানীয় ভাগাভাগি) এইচআইভি ছড়ায় না।
চিকিৎসা:
এইচআইভির কোনো নিরাময় নেই, তবে দীর্ঘস্থায়ী চিকিৎসার মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। অ্যান্টিরেট্রোভাইরাল থেরাপি (এআরটি) রোগীকে দীর্ঘকাল সুস্থ রাখতে এবং অন্যদের কাছে সংক্রমণ ছড়ানো প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
এইডস কী?
অ্যাকোয়ার্ড ইমিউনোডেফিসিয়েন্সি সিন্ড্রোম (এইডস) হলো এইচআইভি সংক্রমণের সবচেয়ে উন্নত পর্যায়। এটি এমন একটি অবস্থা যেখানে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা প্রায় সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যায় এবং বিভিন্ন জীবননাশক রোগ বা ক্যান্সারের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।
লক্ষণ:
যাদের এইডস হয়েছে, তারা প্রায়ই গুরুতর জ্বর, ডায়রিয়া, ওজন হ্রাস এবং ক্যান্সার বা অন্যান্য “অপ্যাচুনিস্টিক ইনফেকশন” দ্বারা আক্রান্ত হয়।
চিকিৎসা:
এআরটি চিকিৎসা এখন বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রোগীদের এইডসে রূপান্তর হওয়া থেকে রক্ষা করতে পারে। তবে যারা সময়মতো এইচআইভি পরীক্ষা করেন না বা চিকিৎসা শুরু করেন না, তাদের মধ্যে এইডসের ঝুঁকি বেশি থাকে।
বিশ্বের চিত্র
বিশ্বব্যাপী ২০২০ সালের হিসাব অনুযায়ী, এইডসে প্রায় ২.৭২ থেকে ৪.৭৮ কোটি মানুষ মারা গেছে। বর্তমানে প্রায় ৩.৭৭ কোটি মানুষ এইচআইভি নিয়ে বসবাস করছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) তথ্যানুসারে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলে ০-১৪ বছর বয়সী আনুমানিক ৮০,০০০ শিশু এইচআইভি নিয়ে বেঁচে আছে। এই শিশুদের অনেকেই মায়ের থেকে ভাইরাসটি পেয়েছে (উল্লম্ব সংক্রমণ)। এই সংক্রমণ প্রতিরোধে WHO-এর ‘ট্রিপল এলিমিনেশন’ উদ্যোগ (এইচআইভি, সিফিলিস এবং হেপাটাইটিস বি) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ভবিষ্যতের লক্ষ্যমাত্রা
মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা এবং থাইল্যান্ড ইতোমধ্যেই উল্লম্ব সংক্রমণ নির্মূলের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। বিশ্ব এইডস দিবসের মূল লক্ষ্য হলো এইচআইভি এবং এইডস সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং সংক্রমণ প্রতিরোধে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ।