দুর্গাপুজো ২০২৫ শুরু হতে বাকি !!

Days
Hours
Minutes
Seconds
চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজো: ইতিহাসের এক চমকপ্রদ কাহিনী

চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজো: ইতিহাসের এক চমকপ্রদ কাহিনী

মানকুণ্ডু, নিজস্ব প্রতিনিধিঃ জগদ্ধাত্রী পুজো, দুর্গাপুজোর মতোই, বাংলার অন্যতম বড় এবং জনপ্রিয় উৎসব। তবে চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজোর জৌলুস সব থেকে আলাদা। আলোর মায়ায় সজ্জিত দেবীর শোভাযাত্রা, সুসজ্জিত মূর্তি, এবং রূপালী অলঙ্কারের মধ্যে দিয়ে এক ভিন্ন রকমের দেবী পূজার অভিজ্ঞতা মিলিয়ে থাকে এখানে। তবে প্রশ্নটা হলো, কীভাবে শুরু হয়েছিল এই পুজো? চলুন, জানি সেই রোমহর্ষক ইতিহাস।

চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজো: ইতিহাসের এক চমকপ্রদ কাহিনী

১৭১০ সালে শুরু হয়েছিল চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজো?

চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজোর ইতিহাস নিয়ে বিভিন্ন মতবাদ রয়েছে। একে কেন্দ্র করে প্রচলিত রয়েছে একটি অত্যন্ত আকর্ষণীয় গল্প। বলা হয়, নদীয়া রাজ্যের রাজা কৃষ্ণচন্দ্র দেবী দুর্গার পুজোর সময় কোনো কারণে নবাবের হাতে বন্দি হয়ে পড়েছিলেন। সেই সময় মায়ের দর্শন না পাওয়ায় রাজা অত্যন্ত দুঃখিত হন। কারাগারে থাকাকালীন সময়ে রাজা কৃষ্ণচন্দ্রকে দেবী জগদ্ধাত্রীর স্বপ্নাদেশ দেন এবং নির্দেশ দেন, কার্তিক মাসের শুক্লা নবমী তিথিতে মায়ের চতুর্ভূজা রূপের আরাধনা করতে।

রাজার মুক্তির পর তিনি সেই স্বপ্নাদেশ অনুসরণ করে জগদ্ধাত্রী পুজো শুরু করেন। এইভাবে চন্দননগরে প্রথম জগদ্ধাত্রী পুজোর সূচনা হয় বলে মনে করা হয়।

চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজো: ইতিহাসের এক চমকপ্রদ কাহিনী

ইন্দ্রনারায়ণ চৌধুরীর কাহিনী

আরেকটি মতবাদের মতে, চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজোর সূচনা করেছিলেন ইন্দ্রনারায়ণ চৌধুরী, যিনি রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের ঘনিষ্ঠ ছিলেন এবং ফরাসি সরকারের দেওয়ানও ছিলেন। শোনা যায়, রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের বাড়ির পুজোয় অতিথি হিসেবে গিয়েছিলেন তিনি এবং পুজোর আয়োজন দেখে মুগ্ধ হয়ে চন্দননগরের লক্ষ্মীগঞ্জের চাউলপট্টিতে প্রথম জগদ্ধাত্রী পুজো শুরু করেন। তবে এই মতের সপক্ষে কিছু দ্বিমতও রয়েছে, কারণ ইন্দ্রনারায়ণের মৃত্যুর সময় এবং পুজোর শুরুর তারিখ নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।

চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজো: ইতিহাসের এক চমকপ্রদ কাহিনী

দাতারাম শূরের ভূমিকা

এছাড়া, অন্য এক কাহিনী অনুযায়ী, রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের দেওয়ান দাতারাম শূর ১৭৬২ সালে ভদ্রেশ্বরের গৌরহাটি অঞ্চলে তাঁর বিধবা মেয়ে দ্বারা জগদ্ধাত্রী পুজো শুরু করেন। এই পুজোতে রাজা কৃষ্ণচন্দ্রও অনুদান দিতেন বলে জানা যায়।

চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজো: ইতিহাসের এক চমকপ্রদ কাহিনী

পরবর্তীকালে, এই পুজোটি শিবতলা অঞ্চলে স্থানান্তরিত হয় এবং কিছুদিন আর্থিক সমস্যার কারণে বন্ধ হওয়ার উপক্রম হলেও গৌরহাটি অঞ্চলের বাসিন্দারা পুজোটি আবার চালু করেন। বর্তমানে এটি পরিচিত তেঁতুলতলা পুজো নামে এবং প্রতি বছর এটি দেখতে বহু মানুষ ভিড় জমান।

চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজো: ইতিহাসের এক চমকপ্রদ কাহিনী

চন্দননগরের পুজোর আজকের চিত্র

আজকাল চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজো একটি প্রখ্যাত ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিক উৎসবে পরিণত হয়েছে। দেবীর বিশাল মূর্তি, রঙিন আলো, সোনালী অলঙ্কার এবং হাজারো মানুষের অংশগ্রহণ এই পুজোকে বিশেষ করে তুলেছে।

চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজো: ইতিহাসের এক চমকপ্রদ কাহিনী

এখনো চন্দননগরের বিভিন্ন অঞ্চলে এই পুজো পালিত হয়, এবং সারা বছর ধরে এর জন্য প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায়। এটি শুধুমাত্র ধর্মীয় উৎসব নয়, বরং একটি বড় সামাজিক মিলনমেলা, যেখানে সমস্ত মানুষ একত্রিত হয়ে আনন্দিত হয়।

চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজো: ইতিহাসের এক চমকপ্রদ কাহিনী

এইভাবে, চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজো আজকের দিনে পৌঁছেছে তার শিখরে, কিন্তু এর শিকড় এতটাই গভীরে যে এর ইতিহাস জানলে যে কেউ চমকে যেতে বাধ্য।

ছবি সৌজন্যেঃ মধুমিতা মুখোপাধ্যায়

Facebook
Twitter
WhatsApp
Telegram
Email
Print
error: Content is protected !!