বিকেল ৫টার পরও সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ সত্ত্বেও কর্মবিরতি প্রত্যাহার করেনি জুনিয়র চিকিৎসকরা। তাঁরা স্বাস্থ্য ভবনের সামনে অবস্থিতি বজায় রেখেছে। দাবি পূরণ না হলে অবিরত এই অবস্থান চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। ইতিমধ্যে, স্বাস্থ্য ভবনের সামনে ভ্রাম্যমাণ শৌচাগার পৌঁছেছে। স্বাস্থ্য ভবনের সূত্র মারফত জানা গেছে, চিকিৎসকদের একটি প্রতিনিধি দল ভিতরে আসার চেষ্টা করলে তাদের স্বাগতম জানানো হবে। তবে জুনিয়র ডাক্তারদের বক্তব্য, তারা ডেপুটেশন দিতে আসেননি। তাঁদের দাবিগুলি স্পষ্ট; সেগুলি মেনে না নিলে অব্যাহত অবস্থান চলবে।

বিকেল ৫টা পর্যন্ত সময়সীমা দিয়েছেন জুনিয়র ডাক্তাররা। এর পর, স্বাস্থ্য ভবনে প্রবেশের অনুমতি না পেলে অনির্দিষ্টকালের জন্য অবস্থান চালানোর হুমকি দিয়েছেন তাঁরা। স্বাস্থ্য ভবনের গেট বন্ধ করে, রাস্তায় বসে পড়েছেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। তাঁদের বক্তব্য, যতক্ষণ না দাবিগুলি পূরণ হচ্ছে, ততক্ষণ অবস্থান চলবে।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সোমবার বলেছেন, “এক মাস তো হয়ে গেল। আমি অনুরোধ করব, পুজোয় ফিরে আসুন, উৎসবে ফিরে আসুন।” মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্যের বিরুদ্ধে বিরোধী দলের তরফে তীব্র প্রতিবাদ হয়েছে। জুনিয়র ডাক্তাররাও জানান, ন্যায় বিচার না পাওয়া পর্যন্ত তারা কোনও উৎসবে অংশ নেবেন না। মঙ্গলবার তাঁরা আবারও নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করলেন। জুনিয়র ডাক্তাররা মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যকে ‘অসংবেদনশীল’ বলে অভিহিত করেছেন।

জুনিয়র ডাক্তারদের দাবি পাঁচটি: ১. আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনার সঙ্গে জড়িত সব দোষীদের দ্রুত চিহ্নিত করা এবং শাস্তি নিশ্চিত করা। ২. তথ্যপ্রমাণ লোপাটে জড়িতদের শনাক্ত করে বিচার। ৩. সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ‘ব্যর্থ প্রমাণিত’ কলকাতা পুলিশের কমিশনার বিনীত গোয়েলের ইস্তফা। ৪. রাজ্যের সব মেডিক্যাল কলেজ, হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা। ৫. রাজ্যের মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভীতিহীন পরিবেশ গড়ে তোলা এবং গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করা।

জুনিয়র ডাক্তাররা স্বাস্থ্য ভবনে ‘সাফাই অভিযানে’ যাওয়ার দাবি তুলেছেন এবং ‘ঘুঘুর বাসা’ ভাঙারও আহ্বান জানিয়েছেন। এই অবস্থায়, একটি জুনিয়র চিকিৎসক বলেছেন, “এবার অন্তত স্বাস্থ্য ভবনকে মাথা খাটিয়ে কাজ করতে হবে।”

করুণাময়ী থেকে শুরু হওয়া জুনিয়র ডাক্তারদের মিছিলে মুহুর্মুহু স্লোগান উঠছে। সাধারণ মানুষও জমায়েতে যোগ দিয়েছেন। ‘উই ডিম্যান্ড জাস্টিস’ স্লোগানে স্লোগান দিতে দিতে জুনিয়র ডাক্তাররা করুণাময়ী থেকে সল্টলেকের স্বাস্থ্য ভবনে যেতে চান। পুলিশ সেখানকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা শক্তিশালী করেছে।

সোমবার বিকেলে আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তাররা তাদের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। আগামী মঙ্গলবার, করুণাময়ী থেকে স্বাস্থ্য ভবন পর্যন্ত মিছিলে অংশ নেবেন তাঁরা। গত ৯ আগস্ট আরজি করের মহিলা চিকিৎসকের দেহ উদ্ধার হওয়ার পর থেকেই এই আন্দোলন শুরু হয়েছে। বিচার দাবি করে জুনিয়র ডাক্তাররা অবস্থান চালিয়ে যাচ্ছেন। রাজ্য সরকারের তরফে বারবার কাজে যোগ দেওয়ার অনুরোধ করা হলেও তাঁরা ফিরে আসেননি।
এদিকে, সুপ্রিম কোর্ট চিকিৎসা পরিষেবায় ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়ার পর আবারও আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে জুনিয়র ডাক্তারদের সংগঠন। পাঁচ দফা দাবির পাশাপাশি রাজ্যের স্বাস্থ্য সচিব, স্বাস্থ্য অধিকর্তা ও স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তার ইস্তফাও দাবি করেছে তারা।