“প্রতিদিন নিজেকে মনে করিয়ে দিই—যদি সুস্মিতা যিনি আজ একজন কিংবদন্তী, তাঁর ভয় জয় করতে পারেন, তবে আমিও পারব। ভয়ের কাছে হার মানা মানে নিজেকে হারিয়ে ফেলা, আর আমি সেটা হতে দেব না।” — নাভ্যা সিং
বিনোদন ও ফ্যাশন দুনিয়ার এক উদীয়মান মুখ, নাভ্যা সিং আবারও সব বাধা ভেঙে এগিয়ে চলেছেন। তিনি মিস ইউনিভার্স ইন্ডিয়া ২০২৪ প্রতিযোগিতার মহারাষ্ট্র ফাইনালে শীর্ষ ১১ প্রতিযোগীর মধ্যে একজন হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। মহারাষ্ট্রের ১০০ জন প্রতিযোগীর মধ্যে থেকে তিনি ফাইনালে উঠেছেন এবং আগামী ১১ সেপ্টেম্বর বিভিন্ন রাজ্যের প্রতিযোগীদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। নাভ্যার যাত্রা শুধু সৌন্দর্য প্রতিযোগিতার জন্য নয়, বরং নতুন ইতিহাস গড়ার। এই বছরই প্রথমবারের মতো ট্রান্স নারীরা এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছেন। নাভ্যা ছাড়াও চেন্নাই এবং দিল্লির আরও দুই ট্রান্স প্রতিযোগী সিসজেন্ডার নারীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করবেন, যা সমান সুযোগ ও প্রতিনিধিত্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হয়ে উঠছে।

নাভ্যা বলেন, “মিস ইউনিভার্স ইন্ডিয়া প্রতিযোগিতার মতো একটি মঞ্চের অংশ হতে পেরে আমি গর্বিত, যা বৈচিত্র্যকে গুরুত্ব দিচ্ছে। এই সুযোগটি শুধু আমার জন্য নয়, বরং সব ট্রান্স নারী এবং প্রান্তিক মানুষের জন্য এক বড় সাফল্য। আমি চাই আমার অভিজ্ঞতা অন্যদের অনুপ্রাণিত করুক, যাতে সবাই নিজের পরিচয় নিয়ে গর্ব করতে পারে এবং লড়াই চালিয়ে যেতে পারে।”
নাভ্যা এর আগে ছোট পর্দায় নিজের জায়গা করে নিয়েছেন, কালার্স টিভির ‘কৃষ্ণ মোহিনী’ সিরিয়ালে তিনি অনুরাধা নামে এক ট্রান্স নারী অধ্যাপিকার চরিত্রে অভিনয় করেছেন। বিহারের কাটিহারে জন্ম নেওয়া নাভ্যার খ্যাতির পথে যাত্রা ছিল সাহস আর আত্মবিশ্বাসের প্রতীক। কিশোর বয়স থেকেই তিনি নিজের লিঙ্গ পরিচয় নিয়ে সমস্যা অনুভব করেন, ২০১১ সালে মুম্বাই চলে আসেন এবং লিঙ্গ পুনর্নির্ধারণ সার্জারি করেন, নিজের আসল পরিচয়কে সম্পূর্ণভাবে গ্রহণ করার জন্য।

সুস্মিতা সেনের ১৯৯৪ সালের মিস ইউনিভার্স জয়ের ৩০ বছর উদযাপন প্রসঙ্গে নাভ্যা বলেন, “সুস্মিতা সেন সবসময়ই আমার জন্য একটি উদাহরণ ছিলেন। যখন তিনি মঞ্চে পা রেখেছিলেন, আমি তাঁর যাত্রাকে ঘনিষ্ঠভাবে অনুসরণ করেছি। মাত্র ১৮ বছর বয়সে তাঁর নিজের ভয় ছিল, আর আমিও এখন নার্ভাস বোধ করছি। কিন্তু প্রতিদিন নিজেকে মনে করিয়ে দিই—যদি সুস্মিতা তাঁর ভয়কে জয় করতে পারেন, আমিও পারব।”
বিহার থেকে ফ্যাশন দুনিয়ার আলো ঝলমলে জগতে নাভ্যার যাত্রা শুরু হয় ২০১৬ সালে, যখন তিনি ল্যাকমে ফ্যাশন উইকে প্রথম ট্রান্স নারী হিসেবে অংশ নেন। তারপর থেকে তিনি আর পেছনে তাকাননি। শীর্ষ ডিজাইনারদের জন্য হাঁটা এবং বড় বড় ইভেন্টে শোস্টপার হিসেবে নিজের জায়গা তৈরি করেছেন। নাভ্যা ধীরে ধীরে সকলের জন্য প্রেরণা হয়ে উঠেছেন, বিশেষ করে প্রান্তিক সম্প্রদায়ের জন্য।