বর্তমানে পৃথিবীর আবহাওয়া চরমভাবাপন্ন হয়ে উঠেছে, যা শুধু তাপপ্রবাহের মতো গরম আবহাওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। শীতকালেও দেখা যাচ্ছে যে কোনো বছর তীব্র শীত পড়ছে, আবার কোনো বছর শীতের তেমন প্রভাব দেখা যাচ্ছে না। ঋতুর সময়সীমার পরিবর্তন, অতি বৃষ্টি বা অনাবৃষ্টির মতো বিভিন্ন আবহাওয়াজনিত পরিবর্তনগুলো মানুষের জীবন ও পরিবেশের উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলছে।
বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (WMO)-এর সেক্রেটারি-জেনারেল পেট্টেরি তালাস বলেছেন, “চরম আবহাওয়া এবং ক্রমবর্ধমান উষ্ণায়নের ফলে বিভিন্ন অঞ্চলে মানুষের স্বাস্থ্য, জীববৈচিত্র্য, অর্থনীতি, বিদ্যুৎ এবং জল সরবরাহের উপর ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।”
বিবিসি ওয়েদারের বিশেষজ্ঞ বেন রিচের মতে, জলবায়ু পরিবর্তন আবহাওয়াকে আরও খারাপ করে তুলছে। এর মধ্যে এল নিনো নামক আবহাওয়াগত প্রভাবটি উল্লেখযোগ্য, যা তাপমাত্রাকে বাড়িয়ে দেয় এবং এটি চরম আবহাওয়ার একটি প্রধান কারণ।
এল নিনো এবং তার প্রভাব
এল নিনো একটি জটিল প্রাকৃতিক ঘটনা যা পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের আবহাওয়ার উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে। ব্রাজিলে ব্যাপক বন্যা বা দক্ষিণ এশিয়ায় তীব্র তাপপ্রবাহ এল নিনোর প্রভাবেই সৃষ্টি হতে পারে।
কোপার্নিকাসের পরিচালক কার্লো বুওনটেম্পো জানিয়েছেন, আটলান্টিক মহাসাগর স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি উষ্ণ হয়েছে, যা এল নিনোর সঙ্গে সম্পূর্ণ যুক্ত নয়, তবে এটি বর্তমান জলবায়ু পরিবর্তনের আরও একটি লক্ষণ।
বৈশ্বিক প্রভাব
বিভিন্ন দেশে চরম আবহাওয়া মানুষের জীবন ও অবকাঠামোতে ব্যাপক ক্ষতি করছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শত শত টর্নেডো বিপুল ক্ষতি করেছে, ব্রাজিল এবং কেনিয়াতে বন্যায় বহু মানুষ প্রভাবিত হয়েছে। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কিছু অংশে রেকর্ড ব্রেকিং তাপমাত্রার কারণে স্কুল বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছে, যার ফলে লাখ লাখ শিশু শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়েছে।
ব্রাজিলের ভারী বৃষ্টি এবং বন্যার কারণে লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। পোর্তোর চার-পঞ্চমাংশ জনসংখ্যা তীব্র জল সংকটের সম্মুখীন হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে এই বছরের টর্নেডো খুবই মারাত্মক আকার ধারণ করেছে।
সমুদ্রের উষ্ণায়ন এবং ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সমুদ্রের উষ্ণায়ন বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের একটি প্রধান কারণ। ইউরোপীয় ইউনিয়নের জলবায়ু পরিষেবা কোপার্নিকাসের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ১৯৪০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে গত এপ্রিলে অন্যান্য যেকোনো বছরের এপ্রিলের তুলনায় তাপমাত্রা বেশি ছিল।
এমতাবস্থায়, বৈজ্ঞানিক গবেষণাগুলি নির্দেশ করে যে পৃথিবীর ভবিষ্যৎ আরও চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে পারে। বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে আরও শক্তিশালী ঝড় এবং বৃষ্টিপাতের ঘটনা বাড়তে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, কয়লা, তেল এবং গ্যাস পোড়ানোর ফলে সৃষ্টি হওয়া জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবেই বৈশ্বিক তাপমাত্রা বাড়ছে। তবে, প্রতিটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ শুধুমাত্র জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে হচ্ছে কিনা, তা বলা কঠিন।
বিশ্বের মানুষকে এই চরম আবহাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে এবং ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। বিশ্বের নেতৃত্বের উচিত এ বিষয়ে আরও সচেতনতা তৈরি করা এবং কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা, যাতে ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করা যায়।