আয়ুর্বেদে নিমকে বলা হয় একটি জাদুকরি গাছ। কারণ, নিম এমন একটি গাছ, যার পাতা, ডাল, শিকড়, এবং বাকল সবকিছুতেই রয়েছে অসংখ্য গুণ। দীর্ঘদিন ধরে এটি চিকিৎসা ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হচ্ছে এর অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুণাবলীর জন্য। এমনকি সৌন্দর্যচর্চাতেও নিমপাতার বিভিন্ন ব্যবহার রয়েছে।
ত্বক চর্চায় নিমপাতার প্রয়োগ

বর্তমানে বিশ্বজুড়ে ত্বকের যত্নের পণ্য তৈরিতে নিমপাতার ব্যবহার বেড়ে চলেছে। ত্বকের সংক্রমণ কমাতে এটি অসাধারণ কার্যকরী, কারণ নিমপাতে প্রচুর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং প্রাকৃতিক অ্যান্টিসেপটিক রয়েছে। নিমপাতার রস ত্বককে আর্দ্র রেখে মসৃণ এবং কোমল করে তোলে।
ব্রণ কমাতে নিমপাতার ভূমিকা
নিমপাতা অ্যান্টি-অ্যাকনে উপাদানে সমৃদ্ধ। ত্বকে ব্রণের সংক্রমণ হলে আক্রান্ত স্থানে নিমপাতা পিষে লাগালে ভালো ফল পাওয়া যায়। নিমপাতায় থাকা ফাঙ্গাস এবং ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধক উপাদান ত্বককে ব্রণ থেকে সুরক্ষা দেয়। নিমপাতার রসও ব্রণের সংক্রমণ কমায়। এ জন্য এক কাপ নিমপাতা তিন কাপ জলে সেদ্ধ করতে হবে। জলের রং সবুজ হয়ে এলে নামিয়ে ছেঁকে ঠাণ্ডা করে বোতলে সংরক্ষণ করতে হবে। প্রতিদিন অন্তত একবার এই জল ব্যবহার করতে হবে। এছাড়া গোসলের জলে নিমপাতা সেদ্ধ জল মেশানো যাবে। এটি ব্রণ কমানোর পাশাপাশি শরীরের দুর্গন্ধও কমাবে।

প্রাকৃতিক টোনার হিসেবে নিমপাতা
বিশেষজ্ঞদের মতে, নিমপাতা সেদ্ধ জল বিশ্বের সবচেয়ে ভালো প্রাকৃতিক টোনার। রাতে ঘুমানোর আগে এই জল কটন বল দিয়ে মুখে মাখতে হবে। এটি ত্বকের ব্রণ, মেছতা, এবং ব্ল্যাকহেডসের বিরুদ্ধে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।

ত্বক সতেজ রাখতে নিমপাতার গুরুত্ব
নিমপাতায় প্রচুর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে, যা ফ্রি র্যাডিকেলের বিরুদ্ধে কাজ করে ত্বককে সতেজ করে। এটি ত্বকের মৃতভাব দূর করে এবং সূক্ষ্ম দাগ ও বলিরেখা মুছে ফেলে। নিমপাতায় থাকা অ্যান্টিসেপটিক উপাদান ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ কমায় এবং প্রাকৃতিক উপাদান হওয়ায় এর ব্যবহারে সংবেদনশীল ত্বকে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার আশঙ্কা নেই।
ত্বকের শুষ্কতা দূর করতে নিমপাতা
যাদের ত্বক অত্যন্ত শুষ্ক, নিমপাতা তাদের জন্য দারুণ কার্যকর। শুষ্ক ত্বকে চুলকানি, বলিরেখাসহ বিভিন্ন সমস্যা দূর করতে নিমপাতা ব্যবহার করা যেতে পারে। নিমপাতার গুঁড়া দুই টেবিল চামচের সঙ্গে কয়েক ফোঁটা গ্রেপ সিড অয়েল মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে ত্বকে লাগিয়ে রাখতে হবে পনেরো মিনিটের জন্য। দুই থেকে তিন সপ্তাহের ব্যবহারে ত্বক উজ্জ্বল হবে।

চুলের যত্নে নিমপাতার ব্যবহার
চুলের যত্নেও নিমপাতা কার্যকর। এটি চুল পড়া কমায়, নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে, চুলের আগা ফেটে যাওয়া রোধ করে। এছাড়া নিমপাতার অ্যান্টিসেপটিক উপাদান খুশকি রোধে সহায়তা করে এবং মাথার ত্বকের রক্তসঞ্চালন বাড়ায়।

সপ্তাহে তিন দিন পরিষ্কার চুলে নিম তেল ব্যবহার করলে মাথার ত্বক সুস্থ থাকে এবং চুল রুক্ষতা কাটিয়ে নরম হয়। মাথার ত্বকের সংক্রমণ বা অতিরিক্ত খুশকির সমস্যা কমাতে নিমের গুঁড়া এবং জল মিশিয়ে মাথায় ম্যাসাজ করা যায়। এটি চুলের প্যাক হিসেবে ব্যবহার করলে কমপক্ষে এক ঘণ্টা রাখতে হবে, তারপর হালকা কোনো শ্যাম্পু দিয়ে মাথা ধুয়ে নিতে হবে। যেকোনো আয়ুর্বেদিক দোকানে নিমের গুঁড়া পাওয়া যাবে। নিমপাতাও ব্যবহার করা যেতে পারে, তবে পাতাগুলো সেদ্ধ করার আগে ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে।