আসাদ সরকারের অবসানের পরপরই আমেরিকার তৎপরতা
সিরিয়ায় পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা বাশার আল-আসাদের সরকার অবশেষে বিদ্রোহীদের দ্বারা উৎখাত হলো। বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) রাজধানী দামেস্ক দখল করার পর আসাদ সরকার পতনের মুখে পড়ে। এরপর রবিবার (৮ ডিসেম্বর) বাশার আল-আসাদ তার পরিবার নিয়ে মস্কোতে আশ্রয় নেন। আসাদ পরিবারের দীর্ঘ শাসনের ইতি ঘটার পরপরই সিরিয়ার পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৭৫টি বিমান হামলা
আসাদ সরকারের পতনের পরপরই মধ্য সিরিয়ায় সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান শুরু করে আমেরিকা। মার্কিন সেনাবাহিনীর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, তারা প্রায় ৭৫টি বিমান হামলা চালিয়েছে। এই হামলা ISIS-এর ঘাঁটিগুলো লক্ষ্য করেই চালানো হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
বিদ্রোহীদের ক্ষমতা দখল ও আসাদের দেশত্যাগ
সিরিয়ার রাজধানী দামেস্ক বিদ্রোহীদের দখলে চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আসাদ পরিবারের শাসনের অবসান ঘটে। হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) বিদ্রোহী গোষ্ঠীর নেতৃত্বে এই অভ্যুত্থান ঘটে। বিদ্রোহীদের দখলে যাওয়ার পর, বাশার আল-আসাদ তার পরিবারকে নিয়ে মস্কোতে আশ্রয় নেন। বিদ্রোহী নেতা আবু মহম্মদ আল-জোলানি, যিনি আইএসআইএসের সঙ্গেও যুক্ত বলে অভিযোগ, এই দখল অভিযানে বড় ভূমিকা পালন করেন।
আমেরিকার এয়ার স্ট্রাইকের উদ্দেশ্য
ইউএস সেন্ট্রাল কমান্ডের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মধ্য সিরিয়ায় আইএসআইএস-এর ঘাঁটি লক্ষ্য করে এই হামলা চালানো হয়েছে। সন্ত্রাসবাদের বিস্তার রোধ করাই এই অভিযানের মূল উদ্দেশ্য। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সতর্ক করে বলেছেন, “আমরা আইএসআইএস-কে সিরিয়ার পরিস্থিতির সুযোগ নিতে দেব না।”
যুদ্ধবিমান ও এয়ার স্ট্রাইকের ভয়াবহতা
এই হামলায় মার্কিন বিমান বাহিনীর বি-৫২ (B-52) বোমারু বিমান, এফ-১৫ (F-15) এবং এ-১০ (A-10) সহ বিভিন্ন অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান ব্যবহার করা হয়। আইএসআইএস-এর ঘাঁটিগুলোতে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি করা হয়েছে। আমেরিকা জানিয়েছে, সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান হিসেবে এই হামলা চালানো হয়েছে, যা সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে পরবর্তী হামলা চালানো থেকে বিরত রাখবে।
বাইডেনের বার্তা—মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা বাড়তে পারে
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সিরিয়ার বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, “আসাদ সরকারের পতনের ফলে মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিতিশীলতা বাড়তে পারে। এটি ঝুঁকিপূর্ণ ও অনিশ্চিত মুহূর্ত।” সেইসঙ্গে তিনি আইএসআইএস-কে কঠোর বার্তা দিয়ে জানিয়েছেন, “আইএসআইএস যদি সিরিয়ার পরিস্থিতির সুযোগ নিতে চায়, তবে আমেরিকা তা হতে দেবে না।”
সিরিয়ার রাজনৈতিক অস্থিরতা ও বিদ্রোহীদের ক্ষমতা দখল আন্তর্জাতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। আমেরিকার সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রমের প্রভাব সিরিয়ার ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করা হচ্ছে।