সাম্প্রতিককালে উপোস করার বিষয়ে বিভিন্ন মতামত শোনা যাচ্ছে। অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, সপ্তাহে অন্তত এক দিন পাকস্থলিকে বিশ্রাম দেওয়া হলে হজমশক্তি বৃদ্ধি পায় এবং শরীরের জমা টক্সিন মুক্ত করার সুযোগ মেলে। যদি সপ্তাহে দু’দিন উপোস করা যায়, তবে এর উপকারিতা আরও বেশি। তবে এ ক্ষেত্রে নিয়ম মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ঠিকভাবে উপোস করলে দ্রুত মেদ কমবে এবং শরীর থাকবে সুস্থ ও সতেজ। সপ্তাহে দু’দিন পুরোপুরি না খেয়ে থাকা বা ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং করলে দিনে ১৬ ঘণ্টা উপোস থাকতে হবে। তবে অনেকেই ১২-১৪ ঘণ্টা দিয়ে শুরু করেন। আসুন জেনে নিই, এর ফলে শরীরে কী কী পরিবর্তন আসতে পারে:
১) রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ: উপোস করার ফলে ইনসুলিন হরমোনের ভারসাম্য বজায় থাকে, ফলে টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমে যায়।
২) ক্যালোরির গ্রহণ কমানো: উপোসের ফলে শরীরে ক্যালোরির প্রবাহ কমে, যা হজমশক্তি বাড়ায়। দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকলে শরীর কিটোসিস মোডে চলে যায়, যার ফলে সঞ্চিত স্নেহপদার্থ থেকে শক্তি উৎপন্ন হয় এবং দ্রুত ওজন কমে।
৩) প্রদাহ কমানো: শরীরে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকলে প্রদাহ ও অস্বস্তি কমে, গ্যাস-অম্বল সমস্যাও হ্রাস পায়।
৪) অটোফ্যাগি প্রক্রিয়া: দীর্ঘ সময় উপোস করলে মৃত ও ক্ষতিগ্রস্ত কোষগুলি পুনরায় তৈরি হয়। এই প্রক্রিয়া চলতে থাকলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে এবং ক্রনিক অসুখের ঝুঁকি কমে।
৫) রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ: উপোসের ফলে রক্তচাপ কমে এবং শরীরে কোলেস্টেরল ও ট্রাইগ্লিসিরাইডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে আসে। এতে হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্যও উন্নত হয়।
৬) ক্যানসারের ঝুঁকি হ্রাস: কিছু গবেষণা অনুযায়ী, নিয়মিত উপোসের ফলে প্রস্টেট ক্যানসার ও কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি কমে।
৭) ত্বকের ঔজ্জ্বল্য বৃদ্ধি: টক্সিন মুক্ত হওয়ায় ত্বক উজ্জ্বল হয় এবং শরীর বেশি তরতাজা দেখায়, মানসিক স্বাস্থ্যও উন্নত হয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, উপোসের আগে ও পরে হালকা খাবার খাওয়া উচিত এবং প্রচুর জল পান করতে হবে। উপোসের পর ভারী বা তেল-মশলাদার খাবার খেলে পেটের সমস্যা, বুক ধড়ফড়, বমিভাব, মাথা ঘোরা ইত্যাদি হতে পারে। ফলে, উপোসের পর ফলের রস পরিমিত পরিমাণে পান করা উচিত। তবে যাঁদের রক্তচাপ, রক্তাল্পতা, হার্টের সমস্যা, ডায়াবেটিস বা কিডনির অসুখ আছে, তাঁদের উপোসের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। অন্তঃসত্ত্বা মহিলাদের জন্য উপোস করা নিষেধ।