শ্ৰীরামকৃষ্ণ হলো এক ধরণের ছাঁচ। মানুষ বানানোর ছাঁচ। তাঁর প্রতি ১% সমর্পণও যদি থাকে জীবনতরী পাই পাই করে ছুটবে, এই বিষয়ে এক ফোঁটাও সন্দেহ নেই। মঠের বর্ষীয়ান সাধুদের মধ্যে ‘ মুমুক্ষানন্দজী’-কে অনেকেই চেনেন। পূজনীয় মহারাজের শরীর তখন খুবই খারাপ, শয্যাশায়ী। একদিন বিকালে তার সেবাককে বলেন, ‘ শোনো হে, তুমি এখন যাও। চা, মুড়ি খেয়ে এসো। তারপরে সন্ধ্যারতি attain করবে। ফিরে এসে আমাকে ডাকবে। যদি সারা না দি, তবে জানবে আমি শরীর রেখেছি। তারপরে বড় মহারাজকে গিয়ে সব বলবে। এখন এসো।’ নিজের জীবনে কতটা কন্ট্রোল থাকলে এমন কথা অবলীলাক্রমে বলা যায়। গীতায় শ্ৰীভগবান বারবার বলছেন, অন্তকালে যোগীর স্মৃতি নষ্ট হয়না। তার মানস পটে তিনি নিজে আসেন। আর তাকে অনন্তধামে নিয়ে যান।
এমনই আর দুটো ঘটনার উল্লেখ করব।
প্রথমটা কাশী সেবাশ্রমের। একজন বর্ষীয়ান মহারাজ কাশী মঠের অধ্যক্ষ( তৎকালীন সময়ে)কে গিয়ে বলেন,’ আজকে আপনারা সবাই সন্ধ্যারতির পরে আমার ঘরে একটু আসবেন দয়া করে। ‘ সেদিন একাদশী ছিল তাই অধ্যক্ষ মহারাজ বলেন, রামনাম আছে, দেরি হবে। উনি তাতেই সম্মতি দেন। যথারীতি রামনাম সেরে সবাই সেই মহারাজের ঘরে গেছেন। উনি বিকালেই সবার জন্য নিজে হাতে পায়েস রান্না করে রেখেছিলেন। সেটাই সবাইকে ভাগ করে দিলেন। সবাই খাওয়ার পরে উনি বলেন, ‘ আপনারা একটু ঠাকুরের নাম করুন। আমি এবার শরীর ছাড়বো। ‘ সবাই তো অবাক। কিন্তু সত্যিই উনি কিছু সময়ের মধ্যেই স্থুল শরীর ছাড়েন।
দ্বিতীয় ঘটনাটা বেলুড়েই। এক ডাক্তার এসেছেন, মঠের একজন বয়স্ক সাধুকে চেকআপ করতে। এসে কুশলাদি জিজ্ঞেস করছেন। সাধু হেসে বললেন, ” ওহে ডাক্তার, বসো। দেখো আমি শরীর ছাড়বো। বলেই উনি মন গোটাতে শুরু করেন। আবার আশ্চর্য-এর বিষয় ডাক্তারকে বলছেন এই দেখো পায়ের থেকে মন তুললাম। ডাক্তার হাত দিয়ে দেখেন, পা পুরো ঠান্ডা হয়ে গেল। ক্রমে নাভি, বুক ; শেষে পুরো ধ্যান মগ্ন হয়ে ঠাকুরে গিয়ে মিশলেন।
আমাদের সবারই চাহিদা একটাই, ঘরে ফিরতে হবে। সে যে, যে মার্গেই থাকুক, আর যাই করুক।সে গৃহী হোক কিংবা বৈরাগী কিংবা কৌল( অবধুত)। ফিরতে হবে সেই ঘরে, যেখান থেকে এসেছি। মাঝের এই কয়টা দিন শুধু কুয়াশায় মোড়া রাস্তায় দিশাহীন হয়ে ঘুরে বেড়ানো, তাই না কি??