_একদিন এক বৃদ্ধা দক্ষিণহস্তে যষ্টি ভর করিয়া কাঁপিতে কাঁপিতে আসিলেন, বামহস্তে ছোট একটি পাতার ঠোঙায় কিছু সন্দেশ। বৃদ্ধার প্রাণের আকিঞ্চন — সাধুসেবা। কিন্তু পরমহংস মহাশয়ের কক্ষে গিয়া দেখেন সেখানে বহুভক্তের সমাগম। এমন অবস্থায় বৃদ্ধা কি করিয়া তাঁহার নিকট প্রাণের কথা বলিবেন ?_
_অতঃপর নহবতে আসিয়া বলিলেন, — তুমিই বুঝি মা, পরমহংস মশায়ের পরিবার ? একটু সন্দেশ এনেছিলুম তাঁকে খাওয়াবো ব’লে ; তা, ওখানে যা’ ভিড়, সে আর হলো না। তুমিই আমার হ’য়ে এটুকু তাঁকে খাইয়ে এসো মা। আমি তোমার এখানেই ব’সে রইলুম।_
_মাতাঠাকুরানী বুঝাইয়া বলেন, — বাইরের লোক থাকলে আমি তো ওখানে যাই না। আপনিই নিজে হাতে ক’রে ঠাকুরকে দিয়ে আসুন, সেটাই ভাল হবে। যাবার সময় আমায় ব’লে যাবেন।_
_অগত্যা নিরুপায় হইয়াই বৃদ্ধা ঠাকুরের কক্ষে পুনরায় গিয়া প্রবেশ করিলেন ; লক্ষ্য করিলেন, তক্তাপোষের নিকটে এক কোণে ভক্তগণ নৈবেদ্য রাখিয়া গিয়াছেন। তিনি অতি সন্তর্পণে তাঁহার ছোট ঠোঙাটি তাহার মধ্যে গুঁজিয়া রাখিলেন এবং সাধুকে একটি দণ্ডবৎ করিয়া চলিয়া গেলেন। সাধুকে বসিয়া খাওয়াইতে পারিলেন না, মাতাঠাকুরানীকেও কিছু বলিয়া গেলেন না।_
_ঐ দিবস ঈশ্বরীয় কথা বলিতে বলিতে ঠাকুরের ভাবাবেশ হয়। তাহা প্রশমিত হইলে ইঙ্গিতে কিছু ভোজনের ইচ্ছা প্রকাশ করেন। গৌরীমা সেখানে উপস্থিত ছিলেন, ইঙ্গিত বুঝিয়া তিনি নিজের মনোমত একটি বড় ঠোঙা বাহির করিলেন। ঠাকুরের তাহা মনঃপূত হইল না, তিনি অঙ্গুলিনির্দেশে অন্য একটি দেখাইলেন। একটির পর অন্যটি করিয়া গৌরীমা বৃদ্ধার ঠোঙাটি স্পর্শ করিলে ঠাকুর উহা আনিতে নির্দেশ দিলেন এবং বৃদ্ধার নিবেদিত সন্দেশ সমস্তই গ্রহণ করিলেন।_
_খালি ঠোঙাটি ফেলিয়া দিবার জন্য নহবতের নিকট দিয়া যাইবার সময় ঠাকুর সেদিন নিজে চাহিয়া খাইয়াছেন, বেশী সন্দেশ খাইয়াছেন, গৌরীমার এই কথা শুনিয়াই মাতাঠাকুরানী বলিয়া উঠিলেন, ” এই তো সেই বুড়ীর ঠোঙা !” আনন্দে তাঁহার বদনমণ্ডল উজ্জ্বল হইল, তিনি পরম তৃপ্তির সহিত বলিলেন, ” আহা গো, বুড়ী আমায় সাক্ষী মেনে গেছলো, ঠাকুর যা’তে তা’র মিষ্টিটুকু খান। তা’ সত্যি হ’য়ে গেল। বুড়ীর কি ভাগ্যি ! বলতো মা ?”_
_পরবর্তী কালে একদিন এই ঘটনাটি বলিতে বলিতে মা একেবারে নীরব হইয়া গেলেন, তাহার পর ঘটনাটি শেষ করিয়া বলিলেন, –‘ ভক্তের ভগবান ‘, কথাটি ঠিক।_
(সংগৃহীত)