শশধর মজুমদার দশ বৎসর বয়সে গর্ভধারিনীকে হারাইয়াছিলেন। তিনি অতিশয় মাতৃভক্ত ছিলেন, গর্ভধারিনীর মৃত্যুর পর ত্রিসন্ধ্যা গায়ত্রী জপের সময় তাঁহারই মূর্ত্তি ধ্যান করিতেন। শ্রীশ্রীমাকে প্রথম দর্শনদিবসে সাষ্ঠাঙ্গে প্রণাম করিয়া যখন তিনি উঠিয়া দাঁড়াইলেন, দেখিলেন, তাঁহার সেই পুণ্যময়ী গর্ভধারিনীই যেন তাঁহাকে বক্ষে টানিয়া লইয়াছেন।স্থানকাল ভুলিয়া তিনি কাঁদিতে লাগিলেন — মা, ওমা, তুমি এতদিন কোথায় ছিলে?
মা বলিলেন, — এই তো বাবা, আমি রয়েছি, তোমার ভয় কি?
পরবর্ত্তী কালে শশধর একদিন শ্রীশ্রীমাকে জিজ্ঞাসা করিয়াছিলেন, — আচ্ছা মা, লোকে তোমাকে কত কি বলে, তুমি বলতো কোনটা সত্যি। একটু সময় চুপ থাকিয়া মা বলিলেন, — লোকে যা-ই বলুক-না বাবা, তোমার কি মনে হয়? উত্তরে শশধর বলেন, —আমি তো ওসবের কিছু বুঝি না মা, আমার মনে হয়, তুমি আমার মা। মা তাঁহার মাথায় হাত রাখিয়া বলিয়াছিলেন, বাবা, তোমার এই বোঝাতেই সব হ’য়ে যাবে, — আমি তোমার মা।
শশধর মজুমদারের পত্নী শ্রীমতী কিরণবালা একদিন তাঁহার পতিকে জিজ্ঞাসা করিয়াছিলেন, — তোমার মা কেমন দেখতে? তদুত্তরে তিনি বলেন, “মার কথা কি বলিব! মার কথা মুখে বলা যায় না। মা যে আমার কি ছিলেন, কেমন ছিলেন, তা’ কি করিয়া তোমাকে বোঝাব? মার চেহারা ছিল পবিত্রতার প্রতিমূর্ত্তি, স্নেহ-মমতায় অন্তর ভরা, হাসিতে মধু ঝরিত। কথা অমৃত-মাখা।মাকে চক্ষে না দেখিলে কথায় কি বোঝানো যায়? মাকে না দেখিলে, বোঝান যায় না, — মা আমার, কেমন মা ছিলেন। তুমি মাকে ধ্যান কর, খালি ধ্যান কর মাকে ; তা’হলে অন্তরেই মাকে দেখিবে, মা দেখা দিবেন। মা কেমন মা, — মা আমার আনন্দময়ী।”. 🙏শশধর মজুমদার🙏