ইজরায়েলের বোমাবর্ষণে কেঁপে উঠল ইরানের রাজধানী তেহরান-সহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। ইরান ও ইজরায়েলের মধ্যে ভয়ানক সংঘর্ষের ইঙ্গিত দিচ্ছে এই হামলা। সম্প্রতি ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র আক্রমণের প্রতিশোধ নিতে সরাসরি ইরানের সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে আঘাত হেনেছে ইজরায়েলি বাহিনী। শনিবার ইজরায়েলি সেনার অবিরাম আক্রমণে তেহরানসহ ইরানের বিভিন্ন জায়গা বোমার আঘাতে কেঁপে ওঠে। পাশাপাশি, ইজরায়েল সিরিয়া এবং ইরাকেও আক্রমণ চালিয়েছে বলে জানা গিয়েছে। ইজরায়েলি ডিফেন্স ফোর্সেস (আইডিএফ) এই হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। এদিকে, ইজরায়েলের এই আগ্রাসনের মোক্ষম জবাব দিতে প্রস্তুত ইরানি সেনাও। ফলে এই উত্তেজনা মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাতকে আরও তীব্রতর করছে।

চলমান সংঘাতের প্রেক্ষাপট
প্রায় এক বছর ধরে গাজায় ইজরায়েলের সঙ্গে রক্তক্ষয়ী লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে হামাস। এই সংঘাতের মাঝে লেবাননের সশস্ত্র সংগঠন হেজবোল্লা, যাদের ইরান সমর্থন করছে, তাদের ইজরায়েলের বিরুদ্ধে আক্রমণ বাড়ানোর ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে। কিছুদিন আগে হামাসের শীর্ষ নেতা ইসমাইল হানিয়েহ ও হেজবোল্লা প্রধান হাসান নাসরাল্লার মৃত্যুর পর আক্রমণের আগুন আরও ঘনীভূত হয়। এরই মধ্যে গত ১ অক্টোবর ইজরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় তেহরান, যার পাল্টা জবাবে ইজরায়েল তাদের আক্রমণ শুরু করেছে।
ইরানের সামরিক ঘাঁটিতে বোমাবর্ষণ
সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের রিপোর্ট অনুযায়ী, ইজরায়েলের সেনা বাহিনী একাধিক ইরানি স্থাপনায় বোমা নিক্ষেপ করেছে। ইজরায়েলের সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়, এই হামলা ইরানের সামরিক ঘাঁটিতে বিশেষভাবে পরিচালিত হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত হতাহতের নির্দিষ্ট কোনও খবর পাওয়া যায়নি। এই আক্রমণের জবাব দিতে ইরানও প্রস্তুত বলে জানিয়েছে। তাদের মতে, ইজরায়েলের এই আগ্রাসনের জন্য তেল আভিভকে চরম মূল্য দিতে হবে।
পরিস্থিতির উপর নজর রাখছে আমেরিকা
ইজরায়েলের এই হামলার সময় দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট সেনা দপ্তরে উপস্থিত থেকে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছিলেন। তেহরানের বাসিন্দারা জানায়, শহরের বিভিন্ন স্থানে কমপক্ষে সাতটি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। ইরানের পরমাণু কেন্দ্রে আক্রমণের গুঞ্জনও শোনা যাচ্ছে, যদিও এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে ইজরায়েলের পক্ষ থেকে কোনো সুনির্দিষ্ট ঘোষণা দেওয়া হয়নি। পুরো পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে আমেরিকা।
যুদ্ধ কি আসন্ন?
সমর বিশ্লেষকরা মনে করছেন, মধ্যপ্রাচ্য বরাবরই যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে রয়েছে। গত ৭ অক্টোবর হামাসের আক্রমণের পর থেকেই ইজরায়েল গাজায় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে। এবার সংঘাতের দিক পাল্টে ইরান-ইজরায়েলের মুখোমুখি লড়াইতে এগিয়ে যাচ্ছে। যে যুদ্ধ গাজার ভিতরে সীমাবদ্ধ ছিল, তা লেবানন ও ইরান হয়ে ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ছে। একদিকে যখন গাজা ও লেবাননের মতো অঞ্চলে যুদ্ধবিরতির দাবি উঠছে, তখন ইজরায়েলের নতুন আক্রমণ পরিস্থিতিকে আরও ঘনীভূত করছে।
Explosions are heard near Tehran as the Israeli military says it is "conducting precise strikes on military targets in Iran", reports The Associated Press.
— ANI (@ANI) October 26, 2024
পশ্চিম এশিয়ায় ক্রমবর্ধমান সংকট
পশ্চিম এশিয়ার পরিস্থিতি ক্রমেই ভয়ংকর আকার ধারণ করছে। তেহরান ও তেল আভিভের মধ্যে এই উত্তেজনা মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতাকে আরও বিপন্ন করে তুলছে। এখন দেখার বিষয়, এই সংঘাত কীভাবে এগোয় এবং ইরানের তরফ থেকে কেমন জবাব আসে।